নির্বাচন সামনে রেখে এ পর্যন্ত অন্তত ১৫টি আসনে প্রার্থিতায় রদবদল এনেছে বিএনপি। কিছু কিছু আসনে দলের বিকল্প প্রার্থীরাও মনোনয়ন জমা দিচ্ছেন। চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সিনিয়র কয়েকজন নেতার আসনে বিকল্প প্রার্থীরাও মনোনয়ন ফরম জমা দিয়েছেন।
মনোনয়ন পরিবর্তন মাঠপর্যায়ের জরিপ, অসন্তোষ ও রাজনৈতিক সমীকরণ বিবেচনায় নিয়ে ‘ধানের শীষের বিজয়’ নিশ্চিত করতে আনা হয়েছে বলে দলীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বগুড়া-৬ (সদর) আসনের পাশাপাশি ঢাকা-১৭ (গুলশান–বনানী–ক্যান্টনমেন্ট) আসন থেকেও নির্বাচন করবেন। ঢাকা-১৭ আসনের প্রধান সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুস সালামকে। তিনি মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ দিনে আজ তারেক রহমানের পক্ষে ফরম জমা দিয়েছেন।
এর আগে এই আসনে জোটপ্রার্থী হিসেবে প্রচার শুরু করা আন্দালিভ রহমান পার্থ এখন ভোলা সদর আসনে নির্বাচন করবেন। পার্থ তারেক রহমানের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এই আসন থেকে ফরম নেননি।
মনোনয়ন তালিকায় সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন এসেছে ঢাকা ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে। ঢাকা-১২ আসনটি বিএনপির ঘোষিত প্রার্থী সাইফুল আলম নীরবের পরিবর্তে যুগপৎ আন্দোলনের মিত্র বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হকের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি ‘কোদাল’ প্রতীকে লড়বেন। নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনে ব্যবসায়ী মো. মাসুদুজ্জামানের ভোটের অনীহার পর সেখানে বিএনপির সাবেক মহানগর সভাপতি আবুল কালামকে মনোনয়ন দেওয়া হয়।
চট্টগ্রামে একাধিক আসনে নাটকীয় পরিবর্তন এসেছে। রাউজান (চট্টগ্রাম-৬) আসনে ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবর্তে গোলাম আকবর খন্দকারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। গতকালই এটি নিশ্চিত করা হয়।
সম্প্রতি সেখানে দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান পদ স্থগিত করা হয় এবং গোলাম আকবরের নেতৃত্বাধীন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির কমিটিও ভেঙে দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্র জানায়, তারেক রহমানের সঙ্গে প্রার্থীদের সাম্প্রতিক মতবিনিময় সভাতেও গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ডাকা হয়নি। ওই আসনে নতুন মনোনয়ন পাওয়া গোলাম আকবর বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা।
চট্টগ্রাম-১৪ আসনটি আগে এলডিপির চেয়ারম্যান অলি আহমদের ছেলে ওমর ফারুকের জন্য ফাঁকা রাখা হলেও অলি আহমদের দল জামায়াতে ইসলামীর নেতৃত্বাধীন জোটে যোগ দেওয়ার পর সেখানে বিএনপি সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান জসিমউদ্দিনকে প্রার্থী করেছে। চট্টগ্রাম-৪ আসনে কাজী সালাহউদ্দিনের পরিবর্তে চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে।
আর চট্টগ্রাম-১১ থেকে সরিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে চট্টগ্রাম-১০ আসনে প্রার্থী করা হয়েছে; চট্টগ্রাম-১১ আসনে মনোনয়ন পেয়েছেন প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের ছেলে সাঈদ আল নোমান।
উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলেও পরিবর্তন এসেছে। বগুড়া-২ আসনে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমানের ঋণখেলাপি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে সেখানে বিএনপির নেতা মীর শাহে আলমকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। তবে মান্না শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতা ফেরত পেয়েছেন।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে সাবেক সচিব মুশফিকুর রহমানের বদলে কবির আহমেদ ভূঁইয়াকে প্রার্থী করা হয়।
মুন্সিগঞ্জ-২ আসনে একমি গ্রুপের চেয়ারম্যান প্রবীণ নেতা মিজানুর রহমান সিনহার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুস সালাম আজাদ এবং মুন্সিগঞ্জ-৩ আসনে কামরুজ্জামান রতনের বদলে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব মো. মহিউদ্দিন আহমেদ মনোনয়ন পেয়েছেন।
ঝিনাইদহ-১ আসনে সদ্য পদত্যাগ করা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানকে প্রার্থী করা হয়েছে। নড়াইল-২ আসনে বিএনপির প্রার্থীর পরিবর্তে জোটসঙ্গী ন্যাশনাল পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান ফরিদুজ্জামান ফরহাদকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-১, যশোর-৫ ও যশোর-৬ আসনেও দলীয় ও জোটগত সমীকরণে নতুন প্রার্থীদের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। মাদারীপুর-১ আসনে কামাল জামাল মোল্লার বদলে নাদিরা আক্তারকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। যশোর-৬ আসনে ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি শ্রাবণকে প্রথমে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।
এদিকে ঝিনাইদহে বিএনপির মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে গণঅধিকার পরিষদ থেকে সদ্য বিএনপিতে যোগ দেওয়া রাশেদ খান।
বিএনপি দুই দফায় ২৭২ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করলেও পরে মিত্রদের জন্য আরও ১৫টি আসন ছেড়ে দেয়। বাকি আসনগুলোর মনোনয়নও চূড়ান্ত হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা হয়নি।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী গণমাধ্যমকে জানান, তার জানা মতে ৩০০ আসনের মনোনয়নই চূড়ান্ত। প্রতিদিন একাধিক পরিবর্তনের কারণে একসঙ্গে তালিকা প্রকাশ করা সম্ভব হয়নি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর