হলের ক্যান্টিনে বসাকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হলের ক্যান্টিনে এ ঘটনার সুত্রপাত।

প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় মতিহার ক্যান্টিনে খাবার খেতে গিয়ে জায়গায় ফাঁকা পেয়ে খেতে বসেন জাহিদ। খাবারের এক পর্যায়ে শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ ভাস্কর সাহার এক কর্মী এসে জাহিদকে বলে এটা তার জায়গা। কিন্তু জাহিদ তাকে অন্য জায়গায় বসতে বলায় তাদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে খাওয়া শেষ করে জাহিদ তার বন্ধু রিফাতের ১২৯ নং রুমে যান। পরে সেখানে ভাস্করের সাহার নেতৃত্ব কয়েকজন ওই রুমে ঢুকে তাদের দুজনকেই মারধর করেন।

মারধরের শিকার দুই শিক্ষার্থী জাহিদ ও মাহফুজুর রহমান রিফাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে রিফাত মতিহার হল ছাত্রলীগের উপ-গণশিক্ষাবিষয়ক সম্পাদক। রিফাত শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা সাকিবুল হাসান বাকির অনুসারী বলে জানা গেছে।

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা ভাস্কর সাহা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউটের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিবের অনুসারী।

এ ঘটনার প্রেক্ষিতে বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় শহীদ মিনারের পাশে শাখা ছাত্রলীগের পদবঞ্চিত নেতা সাকিবুল হাসান বাকির অনুসারীরা ভাস্কর সাহার উপর চড়াও হয়। এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। এরপর সন্ধ্যার দিকে সাকিবুল হাসান বাকিসহ তার সঙ্গে থাকা বেশ কয়েকজনকে নিয়ে পরিবহণ মার্কেটে অবস্থান করলে রাবি ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহার নেতৃত্বে তার অনুসারীরা তাদের  উপর হামলা চালায়।

এ বিষয়ে সাকিবুল হাসান বাকি বলেন, "মতিহার হলে আমার তিন জন ছোট ভাইকে ভাস্কর সাহা মারধর করে। ওরা আমার সাথে সম্মেলন করেছিল, তাই বারবার ফোন দিচ্ছিল। আমরা ছোট ভাইদের নিয়ে বিকেলে পরিবহণে বসেছিলাম। এমন সময় ভাস্করের নেতৃত্বে তার অনুসারীরা আমাদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। আমাদের সবার অভিভাবক খায়রুজ্জামান লিটন চাচা রাজশাহীতে নেই। উনি আসার পর এ বিষয়ে আমরা তার কাছে অভিযোগ জানাব।"

হামলার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা বলেন, শান্ত ও জাহিদ নামের দুই শিক্ষার্থীর মধ্যে ঝামেলা কথা শুনে আমি মিমাংসা করতে সেখানে যাই। পরে সাংবাদিকদের কাছে তারা অভিযোগ করে আমি তাদের গায়ে হাত তুলেছি। যা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। পরে আমি মাসুদের দোকানের সামনে গেলে তারা কয়েকজন আমার উপর অতর্কিত হালমা চালায়।

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব বলেন, "ক্যাম্পাসের মতিহার হলের খাবার টেবিলে বসা নিয়ে ঘটনার সূত্রপাত হয়। আমি জানতে পেরে আমার সভাপতিকে জানাই। কিন্তু তারা অপেক্ষা না করে ছাত্রলীগের হল শাখা সেক্রেটারির গায়ে হাত তুলেন। তারপরেও সমস্যা সমাধান করার জন্য সভাপতি তাদেরকে বারবার কল দিয়ে মতিহার হলের গেস্ট রুমে আসার জন্য বলেন। আমরা প্রায় ৪৫ মিনিট বসে থাকার পরেও তারা না এসে উল্টো বলে তারা তাদের মতো ব্যবস্থা নিবে। তারপরে মতিহার হলের সেক্রেটারি ভাস্কর সাহা পরিবহনে দাড়ানো ছিল তখন বহিরাগত সন্ত্রাসীর এসে আবার ভাস্করের গায়ে হাত দেয়। পরে দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়।"

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক বলেন, আমি বিষয়টি শুনেছি। মতিহার হলের প্রাধ্যক্ষের সাথে কথা হয়েছে; তিনি ইতোমধ্যেই সেখানে পৌঁছেছেন বলে জানিয়েছেন। কোনো শিক্ষার্থীকে মারধরের বিষয়টি প্রমাণিত হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি মোতাবেক অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে শাস্তি প্রদান করা হবে।

সালাউদ্দিন/সাএ