
দীর্ঘদিন অফিসে অনুপস্থিত থেকেও বেতন-ভাতা পাচ্ছেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী রেজিস্ট্রার এবং বিশ্ববিদ্যালয়টির নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি জাকিবুল হাসান রনি। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকেই পালিয়ে বেড়াচ্ছেন তিনি।
জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ মিছিল ও অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা ও গুলিবর্ষণের অভিযোগে জাকিবুল হাসান রনিকে আসামি করে গত বছরের ২ সেপ্টেম্বর কাজী মনিরুজ্জামান সোমেল নামের এক ব্যক্তি ত্রিশাল থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। সেই মামলায় তাকে ২৯ নাম্বার আসামি করা হয়। একই অভিযোগে গত ০৪ মে(রবিবার) ময়মনসিংহের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের দ্রুত বিচার ট্রাইবুনালে জাকিবুল হাসান রনিকে ১ নাম্বার আসামি করে আরেকটি মামলা দায়ের করেন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের প্রতিষ্ঠাতা যুগ্ম আহ্বায়ক ও বাংলা বিভাগের প্রথম ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থী মো. আশিকুর রহমান।
মামলা দায়েরের পর থেকেই অসুস্থতা সহ বিভিন্ন অযুহাত দেখিয়ে অফিসে অনুপস্থিত তিনি। সর্বশেষ গত ১৮ এপ্রিল থেকে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত একাধিক মামলার আসামি জাকিবুল হাসান রনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, ভর্তি বাণিজ্য,ভিন্ন-মতাদর্শের ব্যক্তিদের অত্যাচার-নির্যাতন সহ অসংখ্য অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক এ সভাপতির বিরুদ্ধে। অভিযোগ আছে ছাত্রলীগের প্রভাব খাটিয়ে নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি নিয়েছেন, নিজের স্ত্রীকেও কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিতে বাধ্য করেছেন। নিজের ভাগিনাকে বানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয়ে তৈরি করেছেন মামা-ভাগিনা সিন্ডিকেট। বিশ্ববিদ্যালয়ের যত দুর্নীতি, অনিয়ম সংঘটিত হতো সব এই সিন্ডিকেট দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হতো। স্বয়ং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও এই সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি থাকতেন। একাধিক মামলার আসামি এবং বিগত সময়ে নানা ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ থাকা এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি সাদ কবির বলেন, ‘তার দ্বারা ছাত্রশিবিরের অনেক ভাই বিভিন্নভাবে অত্যাচার নির্যাতিত হয়েছে। তার অত্যাচার-নির্যাতনের কারণে আমাদের অনেক ভাই পড়াশোনা শেষ করতে পারেনি। ছাত্রশিবিরের পক্ষ থেকে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য কয়েক দফায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে সামনে আমরা কঠিন কর্মসূচি দেবো।’
ছাত্রদলের আহ্বায়ক ইমরান হাসান প্রধান বলেন, ‘জাকিবুল হাসান রনি সহ বিগত ১৫ বছরে ছাত্রলীগের যে-সকল সন্ত্রাসী ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মীকে পিটিয়ে আহত ও অসংখ্য মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে তাদের বিষয়ে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে জোড় দাবি জানাচ্ছি।’
বিষয়টি নিয়ে একাধিক মামলার আসামি জাকিবুল হাসান রনির মন্তব্য জানতে তার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে ত্রিশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনসুর আহম্মেদ বলেন, ‘তাকে গ্রেফতারের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুমতি চেয়েছি।বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আমাদেরকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দিয়েছে। তাকে গ্রেফতারে আর কোনো বাঁধা নেই।আমরা তাকে খুঁজছি।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার(ভারপ্রাপ্ত) ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘তার সামগ্রিক বিষয়ে আইনি কি পদক্ষেপ নেওয়া যায়-সে বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন উপদেষ্টার মতামত চাওয়া হয়েছে। মতামত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কর্মক্ষেত্রে অনুপস্থিত থাকার কারণে ইতোমধ্যে তাকে শোকজ এবং পুলিশকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য অনুমতি দেওয়া হয়েছে। আইন উপদেষ্টার মতামত পেলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকেও তার বিষয়ে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর