• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ১৯ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
জিসান নজরুল
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৯ জুলাই, ২০২৫, ০৮:৩৯ রাত

সাজিদের মৃত্যু: সুষ্ঠু তদন্তসহ ১৫ দাবিতে দিনভর উত্তাল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

সাজিদ আবদুল্লাহ’র রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) ক্যাম্পাস। শনিবার বেলা ১১টা থেকে ক্যাম্পাসের প্রশাসন ভবনের সামনে বিক্ষোভ করেছে শিক্ষার্থীরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন, ছাত্র ইউনিয়নসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছে।

বিক্ষোভে শিক্ষার্থীরা পনেরো দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হল- ২৪ ঘন্টার ভেতর প্রাথমিক তদন্তের রিপোর্ট প্রকাশ করতে হবে এবং আগামী ৬ দিনের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন প্রকাশ করতে হবে, হল ও প্রশাসনের তদন্ত কমিটিতে ২ জন করে শিক্ষার্থী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, প্রশাসনের অবহেলা এবং নিরাপদ ক্যাম্পাস নিশ্চিতে ব্যর্থতার দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে নিতে হবে এবং ক্ষতিপূরণ স্বরূপ সাজিদের পরিবারকে এক কোটি টাকা দিতে হবে, সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা স্থাপন ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে আগামী ৬ দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, নতুন হলের নাম “সাজিদ আব্দুল্লাহ’র নামে নামকরণ করতে হবে, তদন্ত কমিটিতে নিরপেক্ষ শিক্ষকদেরকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি আবাসিক হলে শিক্ষার্থীদের এন্ট্রি ও এক্সিট শতভাগ মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে; প্রয়োজন হলে ডিজিটাল কার্ড বা বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা চালু করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়ের চারপাশে পূর্ণাঙ্গ নিরাপত্তাবেষ্টিত বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণের নিশ্চয়তা দ্রুত সময়ের মধ্যে নিশ্চিত করতে হবে. ক্যাম্পাসে স্ট্রিট লাইট স্থাপন ও সক্রিয় রাখতে হবে, ক্যাম্পাসে বহিরাগত প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, মাননীয় উপাচার্য, মাননীয় উপ-উপাচার্য, মাননীয় ট্রেজারার, সম্মানিত হল প্রভোস্ট, সম্মানিত প্রক্টর ও সম্মানিত ছাত্র উপদেষ্টা তাঁদের সবাইকে নিয়মিতভাবে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থাকতে হবে, মেইন গেটের পাশাপাশি সকল এন্ট্রি পয়েন্টে নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিতে হবে, উপরে উল্লিখিত সমস্যা সমাধানে নির্দিষ্ট সময়সীমা (ডেডলাইন) ঘোষণা করতে হবে এবং তার বাস্তবায়নের নিয়মিত অগ্রগতি প্রকাশ করতে হবে, আমাদের দাবিসমূহ ৬ দিনের ভেতর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দৃশ্যমান পদক্ষেণ গ্রহণ করতে হবে।

এদিকে দুপুর দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. জাহাঙ্গীর আলম, ছাত্রউপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম সহ অন্যান্য শিক্ষকরা আন্দোলনকারীদের সাথে কথা বলতে আসেন এবং তোপের মুখে পড়েন। শিক্ষার্থীরাও সেখানে ভুয়া ভুয়া সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। পরে প্রশাসনের ব্যক্তিবর্গ স্থান ত্যাগ করলে শিক্ষার্থীরা প্রধান ফটক আটকে দেন। পরে প্রশাসন ১৫ দফা দাবি মেনে নেয়ার লিখিত আশ্বাস দিলে বিকেল সাড়ে ৪ টায় গেট খুলে দেন তারা।

এর আগে শনিবার বেলা ১১টা থেকে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের প্রতি ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিয়ে পৌনে ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে দুপাশেই আটকে দেন। এতে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ, রেজিস্ট্রার, প্রক্টর সহ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মকর্তারা সেখানে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন।

এসময় শিক্ষার্থীরা ‘তুমি কে আমি কে, সাজিদ সাজিদ’, ‘প্রশাসনের টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘আমার ভাই মরলো কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘বাজেট নাই বাজেট নাই, বাজেট কী তোর বাপে খায়’, ‘সাজিদ ভাইয়ের বিচার চাই’ সহ বিভিন্ন স্লোগান দেন। তাছাড়াও তাদের হাতে বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড ছিল।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছিলাম। আমাদের জানানোর প্রায় পৌঁনে এক ঘণ্টা পর সেই লাশ উদ্ধার করা হয়। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা হওয়ার পরেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগলো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘণ্টা পার হলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স আসেনি। পরে আমরা বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাই। পরে তাকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়।

তারা আরোও অভিযোগ করেন, লাশ সনাক্তের দুই ঘণ্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা কিংবা হল প্রভোস্টের দেখা মেলেনি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গা গুলোতে কোন সিসি ক্যামেরা সচল নেই। এখন আমরা দেখতেও পাচ্ছি না, সে কখন কোথায় গিয়েছে। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নিরাপত্তার ঘাটতি মোটেও কাম্য নয়। আমরা প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগাচ্ছে না। তাদের যদি এতই ঘাটতি থাকে তাহলে আমাদের বলুক আমরা নিজেরা চাঁদা তুলে সিসি ক্যামেরা লাগাবো।

এদিকে বেলা সাড়ে ১১টায় প্রশাসন ভবন থেকে শিক্ষার্থীদের একাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ফুটবল মাঠে যান। সেখানে সাজিদ আবদুল্লাহ’র গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপ-উপাচার্য, কোষাধ্যক্ষ্য, রেজিস্ট্রার সহ অন্য শিক্ষক-কর্মকর্তারা অংশ নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাঁধা দেন। তাদের অপেক্ষা না করেই শিক্ষার্থীরা জানাজা সম্পন্ন করেন। জানাজা শেষে আবারো বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামতে সমবেত হয় তারা। এদিকে শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনার প্রকৃত কারণ উদ্ঘাটন না করা পর্যন্ত ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনেরও ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এর আগে সকাল সাড়ে ১০টায় সাজিদের মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন ও নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে মানববন্ধন করে শাখা ছাত্রদল। তারাও কর্মসূচি শেষে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেন। এদিকে গতকাল শুক্রবার রাতে একই দাবিতে টর্চলাইট মিছিল করেছে শাখা ছাত্রশিবির। তাছাড়াও রাতেই ইবির ছাত্রীহলগুলোতে অবস্থানকারী ছাত্রীরা রাতেই হলের অভ্যন্তরে বিক্ষোভ করেছেন। বিবৃতির মাধ্যমে বিচার দাবি করেছেন বিভিন্ন শিক্ষক ও ছাত্র সংগঠনগুলোও। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিষয়টি নিয়ে চলছে নানা আলোচনা-সমালোচনা। এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শহীদ জিয়াউর রহমান হল কর্তৃপক্ষ আলাদা আলাদা তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপাচার্য (উপ-উপাচার্য) অধ্যাপক ড. এম এয়াকুব আলী বলেন, ইতোমধ্যে তদন্ত কমিটি করেছি। আমরা সবাই মিলে বসেছি। তদন্ত কীভাবে দ্রুত করা যায় সে বিষয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। শিক্ষার্থীরা ব্যথিত ও শোকাহত হয়ে যে কোনো ভাষায় কথা বলতে পারে। এটা তাদের অধিকার। তবে আমরা তাদের সাথেই আছি। তাদের জন্যই কাজ করছি। এদিকে আজকের মধ্যে সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানোর প্রক্রিয়া শুরু হবে বলে বলে জানান কোষাধ্যক্ষ।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, মেধাবী শিক্ষার্থী সাজিদের আকস্মিক মৃত্যুতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা গভীরভাবে মর্মাহত ও শোকাহত। দেশের বাইরে থাকায় সরাসরি আমি উপস্থিত থাকতে না পারা আমার জন্য দুঃখজনক। বিষয়টি জানার পরপরই আমি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের জানিয়েছি। আমি বলেছি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে যতদ্রুত সম্ভব প্রতিবেদন দাখিল করে। এছাড়া শিক্ষার্থীরা যে দাবিগুলো করছে সেগুলো অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। আমরা তাদের দাবির সাথে একমত। শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছি।

প্রসঙ্গত, গত ১৭ জুলাই (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে শাহ আজিজুর রহমান হল সংলগ্ন পুকুরে সাজিদ আব্দুল্লাহর মরদেহ ভেসে থাকতে দেখে শিক্ষার্থীরা। পরে বিকেল সাড়ে ৬ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহটি উদ্ধার করা হয়। সাজিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শহীদ জিয়াউর রহমান হলের ১০৯ নং রুমে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। এ ঘটনায় তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রশাসন।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]