
নাটোরের বাগাতিপাড়া পৌরসভার অধিবাসীরা একটি অস্বচ্ছ ও জটিল কর বিল হাতে পেয়ে হতবাক। রাস্তা ভাঙা, ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, পানির সেবার অনুপস্থিতি এবং অচল স্ট্রিটলাইটের মতো মৌলিক সেবার অভাবে ভুগছেন পৌরবাসী। এর মধ্যেই পৌরসভার পক্ষ থেকে দেওয়া নতুন বিলে 'পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রেইট', 'বিদ্যুৎ রেইট'সহ একাধিক খাতে চার্জ আরোপ করা হয়েছে, যার অধিকাংশ সেবাই বাস্তবে নেই। ফলে নাগরিকদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে।
অনেকে বলছেন, বিলটি এতটাই দুর্বোধ্য যে তাঁরা এটিকে সরকারি নোটিশ ভেবে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। 'স্থানীয় সরকার (পৌরসভা) আইন, ২০০৯'-এর ৭৮ ধারায় পৌর কর আরোপের আগে নাগরিক মতামত ও গণশুনানির বাধ্যবাধকতা এবং ৮৬ ধারায় সেবা ছাড়া কর আদায় না করার বিধান থাকলেও বাগাতিপাড়ায় এই নিয়মের কোনোটিই মানা হয়নি বলে অভিযোগ। নাগরিকদের অভিযোগ, কোনো রকম আলোচনা ছাড়াই তাঁদের ওপর এই অতিরিক্ত কর বিল চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, "বিদ্যুৎ নেই, পরিচ্ছন্নতা নেই তবু বিল আসে! নিজের টাকায় বাড়ির সামনে ড্রেন করিয়েছি, পরিষ্কারও করি নিজে। বিদ্যুৎ বিল তো আলাদা দিই। তা হলে এই 'বিদ্যুৎ রেইট' কেন?" তাঁরা আরও বলেন, "বিলের ভাষা এমন জটিল যে বুঝতেই পারছি না।"
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাগাতিপাড়া পৌরসভার সচিব শহিদুল ইসলাম বলেন, "পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা মাঝে মাঝে করা হয়।" তবে আলো জ্বলে না কিন্তু 'বিদ্যুৎ রেইট' কেন নেওয়া হচ্ছে—এই প্রশ্নে তিনি কর শাখায় যোগাযোগের পরামর্শ দেন।
বর্তমান পৌর প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মারুফ আফজাল রাজন বলেন, "এই কর কাঠামো আগের প্রশাসক নির্ধারণ করেছেন। আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নাগরিক সেবা চালুর চেষ্টা করছি। যদি কেউ মনে করেন, কর বেশি হয়েছে, আবেদন করলে তা পুনর্বিবেচনা করা হবে।"
বিল নিয়ে অস্পষ্টতা ও অতিরিক্ত চার্জের কারণে অনেকে বলছেন, "আমাদের সঙ্গে আলোচনা না করে এই বিল বানানো হলো কেন? প্রয়োজনে পৌরসভা ঘেরাও করব।" প্রায় ২০ হাজার মানুষের এই পৌর এলাকায় বাস্তব সেবার তুলনায় নাগরিকদের ওপর বাড়তি চাপ তৈরি করেছে নতুন এই কর বিল। প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে সেবা নেই, সেখানে কর আদায় কতটা যুক্তিসঙ্গত?
সর্বশেষ খবর