
‘হাজারো মানুষের রক্তের বিনিময়ে দেশটা পুনরায় স্বাধীন হয়েছে। আন্দোলনের সময় আমাদের আত্মীয়-স্বজন শহীদ হয়েছে। আমরা স্বজন হারিয়েছি। আমরা বুঝি স্বজন হারানোর কত ব্যথা, কত যন্ত্রণা। টাকা দিয়েও আমাদের এই ঋণগুলো শোধ করা যাবে না। তাই সরকারের কাছে দাবি- আমি যেন আমার ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কষ্টে না থাকি। আমাদের সম্মান যেন নষ্ট না হয়। আমার স্বামী শহীদ হয়েছে, আমরা যেন শহীদ পরিবারের মর্যাদা নিয়ে সারাজীবন থাকতে পারি। এটাই আমাদের সরকারের কাছে দাবি।’
এভাবেই বুকে চাপা কষ্ট নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন ঢাকায় কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে পুলিশের গুলিতে নিহত রাজবাড়ীর শহীদ আব্দুল গণি শেখের (৪৫) স্ত্রী লাকী আক্তার।
শহীদ আব্দুল গণি রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানপুর ইউনিয়নের নতুন বাজার এলাকার আব্দুল মজিদ শেখের ছেলে। গণি রাজধানীর গুলশান-২ এ সিক্সসিজন নামক আবাসিক হোটেলের কারিগরি বিভাগে কাজ করতেন। তাকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তার স্ত্রী লাকি আক্তার। ২০ বছর বয়সী ছেলে আলামিন শেখ ও ছয় বছর বয়সী মেয়ে জান্নাত।
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই সকালে ঢাকার উত্তর বাড্ডার গুপীপাড়ার বাসা থেকে কর্মস্থলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে হেঁটে রওনা হন গণি। পথে শাহজাদপুরের বাঁশতলা এলাকায় কোটা আন্দোলন ঘিরে সহিংসতার মধ্যে পড়েন তিনি। সংঘর্ষ চলাকালে তার মাথার ডান পাশে গুলি লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে দীর্ঘক্ষণ রাস্তায় পড়ে থাকেন তিনি। পরে স্থানীয় লোকজন হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর দুইদিন পর ২১ জুলাই বিকেলে তার মরদেহ গ্রামের বাড়ি খানখানাপুর আনা হয়।ওই দিন রাত সাড়ে ৮টার দিকে জানাজা শেষে স্থানীয় কবরস্থানে তার মরদেহ দাফন করা হয়।
শহীদ গণির স্ত্রী লাকী আক্তার বলেন, আমার স্বামী ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। তার আয় রোজগার দিয়েই আমাদের সংসার চলতো। ছেলে ও মেয়ের পড়ালেখার খরচ চলতো। কিন্তু তিনি মারা যাওয়ার পর আমরা খুব অসহায়ত্বের মধ্যে আছি। আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর ছেলে আর পড়ালেখা চালিয়ে যেতে পারেনি। পরিবারকে সহযোগিতা করতে সে ঢাকায় ১০ হাজার টাকা বেতনের চাকরি করছে। আমার স্বামী যে হোটেলে কাজ করতো সেই হোটেলে সে চাকরি পেয়েছে। ১০ হাজার টাকার মধ্যে ৫ হাজার টাকা সে বাড়িতে পাঠায় ও আর ৫ হাজার টাকা নিজের খরচের জন্য রাখে।
বাঁধন/সিইচা/সাএ
সর্বশেষ খবর