
পাবনার বেড়া উপজেলার তারাপুর গ্রামে মসজিদের বারান্দা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় উভয় পক্ষ শনিবার রাতে বেড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে। এ ঘটনায় পুলিশ একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।
গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তি হলেন তারাপুর গ্রামের মৃত সুলতান হোসেনের ছেলে সেলিম হোসেন (৪৮)। রবিবার দুপুরে তাঁকে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, পুনরায় সংঘাত এড়াতে ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে প্রশাসন। রবিবার সকালে বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক আদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।
বেড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. মোরশেদুল ইসলাম ১৪৪ ধারা জারির তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, "বেড়া উপজেলার চাকলা ইউনিয়নের তারাপুর গ্রামে নতুন মসজিদের বারান্দা নির্মাণকে কেন্দ্র করে দেশীয় অস্ত্রসহ মারামারি, অগ্নিসংযোগ, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও অস্ত্র প্রদর্শনসহ দাঙ্গা-হাঙ্গামা ঘটেছে। এ ছাড়া পুনরায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানা গেছে।"
তিনি আরও জানান, "এমন অবস্থায় ওই এলাকায় রবিবার সকাল দশটা থেকে পরদিন সোমবার সকাল দশটা পর্যন্ত ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮-এর ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। এ সময় সব প্রকার আগ্নেয়াস্ত্র ও লাঠিসোঁটা বহন ও প্রদর্শন, যেকোনো ধরনের মাইকিং বা শব্দযন্ত্র ব্যবহার, পাঁচ বা অধিক সংখ্যক ব্যক্তির একসঙ্গে চলাফেরা, সভা-সমাবেশ ও মিছিল ইত্যাদি নিষিদ্ধ থাকবে।"
দফায় দফায় সংঘর্ষ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ, মারামারির ঘটনায় শনিবার রাতে উভয় পক্ষ বেড়া থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
বেড়া মডেল থানার ওসি ওলিউর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, এক পক্ষে তারাপুর গ্রামের মৃত আব্দুল প্রামাণিকের ছেলে আব্দুল মতিন প্রামাণিক বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় ৩২ জন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ৮-১০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৬।
অপর পক্ষে একই গ্রামের শাহ আলমের স্ত্রী হোসনে আরা খাতুন বাদী হয়ে আরেকটি মামলা দায়ের করেছেন। এ মামলায় ৫২ জন নামীয়সহ অজ্ঞাতনামা ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলা নম্বর ৭।
শনিবার অভিযান চালিয়ে হামলায় জড়িত অভিযোগে মতিন প্রামাণিকের দায়েরকৃত মামলার এজাহারনামীয় আসামি সেলিমকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি হোসনে আরা খাতুন গ্রুপের লোক।
পুলিশ ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কয়েক বছর আগে বেড়া উপজেলার তারাপুর গ্রামে পুরোনো মসজিদে মিলাদ মাহফিলে কিয়াম পড়া নিয়ে একটি দ্বন্দ্ব হয়। মসজিদের তৎকালীন ক্যাশিয়ার মতিন প্রামাণিকসহ একটি পক্ষ কিয়াম পড়ার পক্ষে অবস্থান নিয়ে নতুন মসজিদ নির্মাণ করে। সম্প্রতি সেই মসজিদের বারান্দা নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তারা। কিন্তু একই গ্রামে দুটি মসজিদ নির্মাণে আপত্তি জানায় অপর পক্ষ।
গত শুক্রবার সকালে মতিন প্রামাণিক গ্রুপ নতুন মসজিদের বারান্দা নির্মাণ করতে গেলে তাতে বাধা দেয় অপর পক্ষের লোকজন। এ সময় হাসুয়া, টেটা ও লাঠিসোটা নিয়ে উভয় পক্ষের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হন। তাঁদের মধ্যে গুরুতর অবস্থায় পাঁচজনকে বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পাবনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
আহতদের মধ্যে হাদিস প্রামাণিক (৪০) বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শনিবার দুপুরে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর খবর জানাজানি হওয়ার পর এদিন বিকেলে ওই এলাকার ২০টি বাড়িতে ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ করে নিহতের স্বজন ও তাদের সমর্থকরা। খবর পেয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনী গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
সবশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনী টহল জোরদার করা হয়েছে।
বেড়া মডেল থানার ওসি ওলিউর রহমান জানান, "মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তবে নিহতের ঘটনায় রবিবার বিকেল সাড়ে চারটা পর্যন্ত তাঁর পরিবার কোনো অভিযোগ বা মামলা করেনি।"
রার/সা.এ
সর্বশেষ খবর