
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে ঝিনাইদহ-৪ আসনে রাজনৈতিক অঙ্গনে প্রাণচাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। বিশেষত তরুণ ভোটারদের মাঝে সচেতনতা ও আগ্রহ চোখে পড়ার মতো। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তারা নিয়মিত মতামত ও বিশ্লেষণ দিচ্ছেন। এ আসনের এক-তৃতীয়াংশ ভোটার তরুণ, যারা এবারই প্রথম ভোট দেবেন। স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, যে প্রার্থী তরুণদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পারবেন, তিনিই জয়ের পথে এগিয়ে যাবেন।
নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রয়েছে কালীগঞ্জ উপজেলা এবং ঝিনাইদহ সদরের ফুরসন্ধি, নলডাঙ্গা, ঘোড়শাল ও মহারাজপুর ইউনিয়ন। এ আসনে মোট ভোটার ৩,২৩,০৩৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১,৬৪,৩৩৮ জন, নারী ভোটার ১,৫৮,৬৯৩ জন এবং তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার ৫ জন।
জামায়াতের মাঠে সক্রিয়তা বাড়ছে
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে কালীগঞ্জ উপজেলা শাখার নায়েবে আমীর, প্রবীণ রাজনীতিক মাওলানা আবু তালিবকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। তিনি নিয়মিত নির্বাচনী মতবিনিময় সভা, কর্মী সমাবেশ ও কৌশলগত পরামর্শে ব্যস্ত সময় পার করছেন। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীসহ সাধারণ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রক্ষা করে চলেছেন নিয়মিত। জামায়াতের সমাবেশে ভিন্ন ধর্মের মানুষের উপস্থিতিও এখন দৃশ্যমান। তাদের নেতাদের বিভিন্ন সভা-সমাবেশে জামায়াতের পক্ষে বক্তৃতা করতে দেখা যাচ্ছে।
কালীগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমীর অধ্যাপক মাওলানা ওলিউর রহমান বলেন, “ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তিনজন শহীদ হয়েছেন, অসংখ্য মামলা ও হামলার শিকার হয়েছেন নেতাকর্মীরা। তবুও আদর্শ থেকে সরে যাননি কেউ। তাই সাধারণ মানুষের মাঝে জামায়াতের প্রতি সহানুভূতির জায়গা তৈরি হয়েছে। ফলে বিগত ১৭ বছরে জামায়াতের কর্মী-সমর্থক বহুগুণে বেড়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, “জামায়াতের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচারণা আজ আর টেকে না। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী তরুণদের কাঙ্ক্ষিত বাংলাদেশ বিনির্মাণে জামায়াত অগ্রণী ভূমিকা রাখায় তারা জামায়াতের প্রতি আস্থাশীল। নারীর প্রতি জামায়াত কর্মীদের সম্মানজনক আচরণ নিয়ে নারীরাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভূয়সী প্রশংসা করছেন। তারাও জামায়াতকে ক্ষমতায় দেখতে চাচ্ছেন। ভিন্ন ধর্মাবলম্বীরাও এখন পরিবর্তন চায় এবং তারা জামায়াতকে বিশ্বাস করছে। জামায়াতের অমুসলিম শাখায় সদস্য সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়া জামায়াতের কর্মীরা সন্ত্রাস, ধর্ষণ বা চাঁদাবাজিতে জড়িত নয় - এটাই আমাদের বড় শক্তি। ফলে আগামী নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামী এ আসনে বিজয়ী হবে ইনশাআল্লাহ।”
বিএনপির প্রার্থী ঠিক হয়নি, গ্রুপিংয়ের অভিযোগ
বিএনপি এখনও প্রার্থী চূড়ান্ত করেনি। তবে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন- সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক; হামিদুল ইসলাম হামিদ, কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক; এবং জেলা বিএনপির উপদেষ্টা ও সাবেক এমপি মরহুম এম শহীদুজ্জামান বেল্টুর স্ত্রী মুরশিদা জামান। তিনজনই নিজ নিজ অবস্থান থেকে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। তারা বিভিন্ন সামাজিক, ধর্মীয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অংশগ্রহণ করছেন, হাটবাজারে কুশল বিনিময় করছেন এবং কর্মীদের নিয়ে সভা-সমাবেশ করছেন।
তবে কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপিতে অন্তর্কোন্দল প্রকট। বিভিন্ন গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। জামাল ইউনিয়নে বিএনপির এক পক্ষের দুই সহোদর হত্যাকাণ্ডে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে। এই ঘটনায় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা ডাক্তার নুরুল ইসলামসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হয়েছে। ফলে উপজেলার পূর্বাঞ্চলে বিএনপির কার্যক্রমে স্থবিরতা এসেছে এবং সাধারণ মানুষের আস্থা কিছুটা কমেছে।
মনোনয়ন নিয়ে বিএনপির স্ব-স্ব গ্রুপের নেতাদের প্রত্যাশা- উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম সাইদুল বলেন, “সাইফুল ইসলাম ফিরোজ একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, শিক্ষিত নেতা। জিয়া পরিবারের প্রতি তার রয়েছে অটল সমর্থন। বিপদে-আপদে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেন বলেই আজ তার জনভিত্তি সুদৃঢ়। সম্প্রতি সব শ্রেণি পেশার মানুষ ও বিভিন্ন ধর্মের লোকজন নিয়ে বেশ কয়েকটি সম্প্রীতি সমাবেশ করেছেন। মাদক ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তার স্পষ্ট অবস্থান। ফলে কালীগঞ্জের মানুষ আগামী দিনেও সাইফুল ইসলাম ফিরোজকে গ্রহণ করবে এবং দলও তার প্রতি আস্থা রেখে তাকেই মনোনয়ন দেবে বলে আশা করছি।”
উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মাহবুবুর রহমান মিলন বলেন, “হামিদুল ইসলাম হামিদ তৃণমূলের নেতা। প্রত্যেক নেতাকর্মী ও এলাকার মানুষের সঙ্গে তার সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। লোকাল ছেলে হিসেবে তাকে সবসময় কাছে পাওয়া যাবে। এসব বিবেচনায় দল হামিদুল ইসলাম হামিদকেই মনোনয়ন দেবে বলে আমাদের বিশ্বাস। দল মনোনয়ন দিলে এ আসনে বিএনপি বিপুল ভোটে জিতবে বলে আমরা মনে করি।”
কালীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক ও জেলা বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ভিপি ইসরাইল হোসেন বলেন, “মুরশিদা জামান বেল্টু সাহেবের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবেন। বিভক্ত বিএনপিকে ঐক্যবদ্ধ করতে তাঁর বিকল্প নেই। আমাদের বিশ্বাস আসনটিতে বিজয়ী হতে কেন্দ্র আমাদের নেত্রী মুরশিদা জামানকেই মনোনয়ন দেবে।”
তবে উপজেলা বিএনপির সাবেক সেক্রেটারি তবিবুর রহমান মিনি জানান, “দল যাকে মনোনয়ন দেবে, আমরা সবাই মিলে তার পক্ষেই কাজ করব। মনোনয়নের পর বিভক্তি কেটে যাবে।”
অন্যদের মাঠে উপস্থিতি সীমিত
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মুফতি আহম্মদ আব্দুল জলিল প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। তবে তার কার্যক্রম অন্যদের তুলনায় সীমিত। গণঅধিকার পরিষদ থেকে প্রভাষক সাখাওয়াত হোসেন মনোনয়ন প্রত্যাশী হলেও দৃশ্যমান কোনো কার্যক্রম নেই। জাতীয় নাগরিক পার্টিও মাঠে অনুপস্থিত।
সর্বশেষ খবর
রাজনীতি এর সর্বশেষ খবর