
গাজা উপত্যকায় ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের মধ্য দিয়ে প্রতিদিনই বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ১৪ জন ফিলিস্তিনি নাগরিক ক্ষুধা ও অপুষ্টির কারণে প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। নিহতদের মধ্যে রয়েছে এক নবজাতকও।
সোমবার (২৮ জুলাই) গাজার আল-শিফা হাসপাতালের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মৃত নবজাতকের নাম মুহাম্মদ ইব্রাহিম আদাস। শিশুটি অপুষ্টিতে ভুগছিল এবং প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী, বিশেষ করে বেবি ফর্মুলার অভাবে তার মৃত্যু হয়।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আরও জানিয়েছে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে বিগত কয়েক মাসে শিশুখাদ্য ও ওষুধসহ জরুরি সহায়তা প্রবেশে মারাত্মক বাধা সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে এ পর্যন্ত ক্ষুধা ও অপুষ্টিতে মোট ১৪৭ জন ফিলিস্তিনি প্রাণ হারিয়েছেন, যার মধ্যে অন্তত ৮৮ জন শিশু।
আন্তর্জাতিক সংস্থার হুঁশিয়ারি
জাতিসংঘের বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি (WFP) সতর্ক করে বলেছে, গাজায় বর্তমানে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি বিরাজ করছে। প্রতিদিনের ন্যূনতম প্রয়োজন ১০০ ট্রাক খাদ্য, অথচ গড়পড়তায় প্রবেশ করছে মাত্র ৬০ ট্রাক। ফলে ঘরে ঘরে খাদ্যসংকট ভয়াবহ রূপ নিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের অবস্থান
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক বিবৃতিতে বলেন, “গাজায় বহু মানুষ বাস্তবিকই অনাহারে ভুগছে।” তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, গাজায় খাবার সরবরাহের জন্য শিশুকেন্দ্রসহ খাদ্য বিতরণ কেন্দ্র স্থাপন করবে যুক্তরাষ্ট্র।
অন্যদিকে, ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু দাবি করেছেন, “গাজায় কেউ অনাহারে নেই” এবং তিনি হামাসকে দায়ী করেছেন সাহায্য কার্যক্রম ব্যাহত করার জন্য।
মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
গাজা কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রায় ৪০ হাজার নবজাতক বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে, কারণ শিশুদের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী ১৫০ দিনের বেশি সময় ধরে আটকে আছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো এ পরিস্থিতিকে ‘মানবাধিকার লঙ্ঘনের গুরুতর নিদর্শন’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
গাজার পরিস্থিতি এখন রীতিমতো মানবিক বিপর্যয়ের স্তরে পৌঁছেছে। ক্ষুধা ও অপুষ্টির বলি হচ্ছে অসহায় নারী ও শিশুরা। আন্তর্জাতিক সহায়তা আরও জরুরি হয়ে পড়েছে, তবে রাজনৈতিক অচলাবস্থার কারণে সংকট সমাধানের আশা ক্ষীণ। একদিকে যুদ্ধ, অন্যদিকে অভুক্ত শিশুদের কান্না—গাজায় এখন শুধু মৃত্যুর ছায়া।
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর