
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) শিক্ষার্থী সাজিদ আব্দুল্লাহ’র শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গতকাল সাজিদের ভিসেরা রিপোর্টে এমন তথ্য উঠে এসেছে। হত্যার প্রতিবাদ ও জড়িদের বিচারের দাবিতে সোমবার বেলা সাড়ে ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি করেছেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের আল কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের নেতৃত্বে এ কর্মসূচি হয়।
কর্মসূচিতে শাখা ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র আন্দোলন, জমিয়তে তালাবাসহ বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন অংশ নেয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) তদন্তের দায়িত্ব ও জড়িতদের বের করে শাস্তির আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি স্থগিত করেন। এর আগে শিক্ষার্থীরা বেলা ১১ টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করে শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিলটি ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে প্রশাসন ভবন চত্বরে শেষ হয়।
এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, সাজিদকে সুপরিকল্পিত হত্যা করা হয়েছে। এটি কোনো স্বাভাবিক মৃত্যু নয়, এটি ছিল পূর্বপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। এই ঘটনার অনেকদিন পেরিয়ে গেলেও এখনো কোনো মামলা করেনি প্রশাসন। তারা বিভিন্ন তালবাহানা করছে। আমরা চাই অবিলম্বে পিবিআই এর মাধ্যমে তদন্ত হোক। আমরা খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক বিচার চাই। হত্যার বিচার এবং সুষ্ঠু তদন্ত নিশ্চিত করা পর্যন্ত মাঠ ছাড়বো না।
উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, সাজিদের হত্যাকাণ্ডের বিচার অবশ্যই হবে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হবে। এটা ক্রিমিনাল কেস। পুলিশ প্রশাসনের কাছে মামলা দেয়ার পরে তারা যে ধরণের সাহায্য সহযোগিতা চাইবে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে। এছাড়া আজকের মধ্যেই একটি আনুষ্ঠানিক মামলা রুজু করা হবে। দোষীদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা ইতোমধ্যে উচ্চতর তদন্ত কমিটি গঠনের ঘোষণা দিয়েছি। আজ সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জড়িতদের শাস্তির ব্যাপারে আমরা শতভাগ কঠোর অবস্থানে আছি।
ফ্যাক্টস্ ফাইন্ডিং কমিটির প্রতিবেদন জমা ও উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ: গতকাল রবিবার বিশ্ববিদ্যালয়ের গঠিত ফ্যাক্টস ফাইন্ডিং কমিটি প্রতিবেদন প্রশাসনের কাছে জমা দিয়েছে। প্রতিবেদনে কমিটি বিষয়টি উচ্চতর তদন্তের জন্য প্রশাসনের কাছে সুপারিশ করে। গতকাল রাত সাড়ে আটটায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিলো মৃত্যুর কারণ উদঘাটনের জন্য। আমাদের সদস্যরা দিনরাত নিরলসভাবে পরিশ্রম করেছেন। আমরা সংশ্লিষ্টসহ অন্তত শতাধিক জনের সাক্ষাৎকার নিয়েছি। তাছাড়া ময়নাতদন্ত, সুরতহাল ও ভিসেরা রিপোর্টের পাশাপাশি তার ফোন কল লিস্ট, মোবাইল নেটওয়ার্ক ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সব তথ্য ক্রস চেক করে ফাইনাল রিপোর্ট প্রশাসনের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এসময় তিনি বলেন, ১৬ জুলাই বিকেল পৌঁনে ৫টা থেকে লাশ ভেসে উঠার মধ্যে সাজিদের অবস্থানের বিষয়ে ‘ট্রেস’ পায়নি তদন্ত কমিটি। তবে সাজিদের মৃত্যুটি স্বাভাবিক নয় বলে সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন তারা। একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে উচ্চতর তদন্তের সুপারিশ করেছেন তারা।
সিসিটিভি ফুটেজ মেলেনি: এদিকে আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত গুরুত্বপূর্ণ ১৬ জুলাইয়ের নির্দিষ্ট সময়ের সিসি টিভি ফুটেজ পায়নি ফ্যাক্টস্ ফাইন্ডিং কমিটি। এ নিয়ে ক্যাম্পাসজুড়ে সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. এমতাজ হোসেন বলেন, আমরা সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করেছি। ফুটেজ দেখেই অনেককে প্রশ্ন করছি। তবে আইসিটি সেল নিয়ন্ত্রিত ডায়না চত্বর থেকে সাদ্দাম হলমুখী সিসিটিভি ফুটেজ ১৬ তারিখ বিকেল ৫ টার পর থেকে রাত ১১ টা পর্যন্ত তারা দিতে পারেনি। কিন্তু একই সময়ের অন্যান্য জায়গার ফুটেজ আমরা পেয়েছি। আমাদের সুপারিশমালায় এই কথা আমরা কিন্তু উল্লেখ করে দিয়েছি
আইসিটি সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহজাহান আলী বলেন, ফুটেজ গায়েব হয়েছে বিষয়টি এমন নয়। এই বিষয়টি নিয়ে একটু মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ করতেছি। ফুটেজ আছে কিনা জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, বিষয়টি এভাবে সরাসরি বলা যাচ্ছে না। আমরা দেখতেছি।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর