
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) করা মামলায় বিশ্ববিদ্যালয়টির সাবেক উপাচার্য (ভিসি) নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) তাকে গ্রেপ্তারের পর ঢাকার সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে হাজির করা হয়। শুনানিকালে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে বিচারকের সঙ্গে কথা বলেন কলিমুল্লাহ। তিনি দাবি করেন, “শিক্ষামন্ত্রী থাকাকালীন দীপু মনি আমাকে অন্যায় আবদার রাখতে বাধ্য করতেন। সেই থেকে রাগান্বিত হয়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে।”
বিচারক তখন বলেন, “আপনি তো ফুলটাইম ঢাকায় থাকতেন।” উত্তরে কলিমুল্লাহ দাবি করেন, “না স্যার, আমি রংপুরেই থাকতাম।”
বিচারক আরও জানতে চান, “আপনি ও আপনার মা একসাথে কোনো নিয়োগ বোর্ডে ছিলেন?” জবাবে কলিমুল্লাহ বলেন, “না স্যার। নিয়োগ সরকারিভাবে করা হয়েছিল। আমি নিজে নিয়োগ দেইনি।” তখন বিচারক মন্তব্য করেন, “নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার এমনিতেই আপনার নেই। তবে আপনি একইসঙ্গে ভিসি, বিভাগীয় প্রধান ও ডিন ছিলেন— ঢাবি বা অন্য কোথাও এমন দেখা যায় না।”
এ সময় কলিমুল্লাহ বলেন, “রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিস্থিতি একটু আলাদা ছিল। আগের ভিসিরাও একইভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন।”
বিচারক তখন বলেন, “আপনার বিরুদ্ধে ভর্তি বাণিজ্য ও নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে।” উত্তরে কলিমুল্লাহ বলেন, “আমি এসবের বিরুদ্ধে ছিলাম বলেই ষড়যন্ত্র করে আমাকে জড়ানো হয়েছে।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বলেন, “উনি দাবি করছেন তিনি প্রতিদিন ১৭ ঘণ্টা অফিস করতেন, অথচ টিভির টকশোতে নিয়মিতভাবে উপস্থিত থাকতেন— এটা সবাই দেখেছে।”
শুনানি শেষে বিচারক মন্তব্য করেন, “কবরে যেমন কেউ সঙ্গে যায় না, জেলেও কেউ যায় না। আপাতত আপনাকে জেলেই যেতে হবে। আপনার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে, একমাত্র আলিমুল গায়েব জানেন আপনি কী করেছেন, আপনি নিজেও জানেন। কিছুদিন পর দুদক জানবে, এরপর মানুষ জানবে। যতদিন জেলে থাকবেন, ভালো থাকবেন। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা দেওয়া হবে।”
৩০ কোটি টাকার প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ
প্রসঙ্গত, গত ১৮ জুন দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কলিমুল্লাহসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে মামলা করে। মামলায় অভিযোগ করা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার করে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদিত ডিপিপি উপেক্ষা করে নকশা পরিবর্তন করেন। তারা ৩০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চুক্তি সম্পাদন করেন মন্ত্রণালয় বা বিভাগের অনুমোদন ছাড়া।
এছাড়া ঠিকাদারের রানিং বিল থেকে কেটে রাখা নিরাপত্তা জামানত এফডিআর হিসেবে ব্যাংকে জমা রেখে, সেই এফডিআর-এর বিপরীতে ঠিকাদারকে লোন দিতে নো-অবজেকশন সার্টিফিকেট (এনওসি) প্রদান করা হয়, যার মাধ্যমে চার কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সর্বশেষ খবর