
গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর স্টাফ রিপোর্টার আসাদুজ্জামান তুহিনের স্ত্রী ফরিদা বেগম মুক্তা এক আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে তুহিন হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের দ্রুত বিচার এবং সারাদেশের সাংবাদিকদের নিরাপত্তায় সরকারের জরুরি পদক্ষেপের দাবি জানিয়েছেন।
“আর যেন কোনো সাংবাদিকের স্ত্রী অকালে বিধবা না হয়”—এই প্রতিপাদ্য সামনে রেখে তিনি ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে সাংবাদিকদের মাধ্যমে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
মঙ্গলবার বিকেলে গাজীপুর প্রেসক্লাবে লিখিত বক্তব্যে ফরিদা বেগম মুক্তা বলেন, “আপনাদের সাহসী রিপোর্টের কারণেই আজ আমার স্বামীর হত্যার রহস্য উদঘাটন সম্ভব হয়েছে। আমি ও আমার পরিবার আপনাদের কাছে চিরকৃতজ্ঞ। আপনাদের লেখনির কারণেই জাতি জানতে পেরেছে আমার স্বামীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের পেছনে কারা ছিল। না হলে হয়তো আরও একটি সাগর-রুনি হত্যার মতো ঘটনা চাপা পড়ে যেত।”
তিনি জানান, সাংবাদিক তুহিন হত্যার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই গাজীপুর মহানগর পুলিশ ও র্যাবের সদস্যরা ৮ জনকে গ্রেফতার করেছেন—যা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তবে এই হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা ও অর্থের যোগানদাতাদেরও দ্রুত আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।
৭ দফা দাবি
সংবাদ সম্মেলনে মুক্তা বেগম যে দাবিগুলো উত্থাপন করেন:
১. হত্যায় জড়িত সব আসামিকে দ্রুত গ্রেফতার।
২. ১৫ দিনের মধ্যে চার্জশিট দাখিল।
৩. মামলার বাদী, সাক্ষী, পরিবার ও দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর সম্পাদক খায়রুল আলম রফিকের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ।
৪. মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করে ৯০ দিনের মধ্যে বিচার সম্পন্ন।
৫. বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আসামিদের কারাগারে রাখা।
৬. তুহিনের পরিবার ও সন্তানদের দায়িত্ব রাষ্ট্রের নেওয়া।
৭. সাংবাদিকদের জন্য নিরাপত্তা হটলাইন চালু এবং সুরক্ষা আইন প্রণয়ন।
মুক্তা বেগম আরও বলেন, “আমার সন্তানদের চোখে এখনও বাবার জন্য অপেক্ষা। আমি চাই না, আর কোনো সাংবাদিকের স্ত্রী এইভাবে একা হয়ে যাক। মামলার বিচার শুরুর আগেই যেন থেমে না যায়। মাননীয় স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা, আইন উপদেষ্টা ও আইজিপির সঙ্গে দ্রুত সাক্ষাতের ব্যবস্থা করতে হবে। তুহিন দেশের জন্য কাজ করেছে—এখন দেশেরই উচিত তার পরিবারকে রক্ষা করা।”
সংবাদ সম্মেলনে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ-এর সম্পাদক খায়রুল আলম রফিক সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন,
“গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান আমাকে আশ্বাস দিয়েছেন, মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য যা যা দরকার সব করবেন। ইতোমধ্যে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে আসামি শনাক্ত, দ্রুত গ্রেফতার এবং একজনের ১৬৪ ধারায় আদালতে জবানবন্দি সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ৭ দিনের মধ্যে চার্জশিট এবং ৯০ দিনের মধ্যে বিচারিক আদেশ পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছেন তিনি।”
জিএমপি কমিশনারের ভাষায়, “চাঁদাবাজ, মাদককারবারি ও সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কলম ধরতে গিয়ে তুহিন শহীদ হয়েছেন। আমি তাকে বীর শহীদ কলম যোদ্ধা বলতে চাই।”
খায়রুল আলম রফিক আরও বলেন, “বাংলাদেশে আমার ছোট ভাই সমতুল্য কলম সৈনিক আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যার বিচার ও রায় কার্যকর হলে তা হবে দেশের বিচার ব্যবস্থার একটি মাইলফলক। পাশাপাশি এই রায় স্মরণীয় হয়ে থাকবে।”
তিনি সুশীল সমাজ, মানবিক ব্যক্তি ও শিল্পপতিদের প্রতি আহ্বান জানান, তারা যেন তুহিনের পরিবারকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
গাজীপুর তথা সারা দেশের সাংবাদিকদের উদ্দেশে তিনি ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, “তুহিনের হত্যার বিচার ও ফাঁসির দাবিতে মানববন্ধন, বিক্ষোভ, মিছিল ও মিটিং করার জন্য আমি সাংবাদিক মহলের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
সর্বশেষ খবর