 
          
 
সাম্প্রতিক সময়ে ‘স্লিপ ডিভোর্স’ বা দম্পতিদের আলাদা ঘরে ঘুমানোর প্রবণতা বাড়ছে। কেউ বলেন, এতে ঘুমের মান উন্নত হয়, ক্লান্তি ও ঝগড়া কমে। স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলোতে একই বিছানায় দুটি আলাদা কম্বল ব্যবহার করাও জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তবে তাইওয়ানের এক সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে—অন্য ঘরে ঘুমানো সব সময় সম্পর্কের জন্য উপকারী নয়; বরং এটি মানসিক সুস্থতায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
বুধবার (২৯ অক্টোবর) ফক্স নিউজ জানায়, তাইওয়ানের উত্তরাঞ্চলে ৮৬০ জন বয়স্ক দম্পতিকে নিয়ে করা এই গবেষণা ‘বিএমসি পাবলিক হেলথ’ সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়েছে। গবেষকরা সুখ, জীবন সন্তুষ্টি ও পরিপূর্ণতার মতো মানসিক সূচকের সঙ্গে ঘুমের ধরন ও অবস্থানের সম্পর্ক বিশ্লেষণ করেছেন। ফলাফল দেখিয়েছে—যেসব দম্পতি আলাদা ঘরে ঘুমান, তাদের মানসিক সুস্থতা তুলনামূলকভাবে কম।
গবেষকদের মতে, বয়সে প্রবীণ দম্পতিদের ক্ষেত্রে একসাথে থাকা বা একই বাড়িতে বসবাসের চেয়ে একই বিছানায় ঘুমানো মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের ভাষায়—ঘুমের স্থান ‘একটি গুরুত্বপূর্ণ মনস্তাত্ত্বিক উপাদান’ যা দাম্পত্য সম্পর্কের সামগ্রিক সুখকে প্রভাবিত করে।
যুক্তরাষ্ট্রের র্যান্ড করপোরেশনের ঘুম-বিশেষজ্ঞ ড. ওয়েন্ডি ট্রোক্সেল বিষয়টি নিয়ে ফক্স নিউজকে জানিয়েছেন, ‘ঘুমের ধরন ও সম্পর্কের মানসিক ঘনিষ্ঠতার মধ্যে গভীর যোগসূত্র রয়েছে।’ তিনি বলেন, আলাদা ঘুমানোর সিদ্ধান্ত অনেক সময় মানসিক দূরত্ব বা সম্পর্কের টানাপোড়েনের জন্যও হতে পারে। তবে এটি কারণ নাকি ফল, তা স্পষ্ট নয়।
ড. ট্রোক্সেল আরও জানান, বয়স্কদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকেরই অনিদ্রা বা ঘুমে বিঘ্নের সমস্যা থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘুম হালকা হয়, রাতে ঘুম ভেঙে যায় এবং গভীর ঘুমের পরিমাণ কমে। একাকিত্ব, বিষণ্নতা ও উদ্বেগ ঘুমের মান আরও খারাপ করে, যা আবার মানসিক স্বাস্থ্যের অবনতি ঘটায়—এ যেন এক অবিরাম চক্র।
তিনি বলেন, ঘুমের ধরন নির্ধারণের একক সূত্র নেই। কারও জন্য একসাথে ঘুমানো নিরাপত্তা ও ঘনিষ্ঠতার প্রতীক, আবার কারও জন্য আলাদা ঘুমানোই স্বাস্থ্যকর। গুরুত্বপূর্ণ হলো—দম্পতিদের খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে পারস্পরিক সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া।
ড. ট্রোক্সেল উল্লেখ করেন, একসাথে ঘুমানো বা জড়িয়ে শোয়া শরীরে ‘অক্সিটোসিন’ হরমোন নিঃসরণ করে, যা ভালোবাসা ও নিরাপত্তার অনুভূতি বাড়ায়, স্ট্রেস কমায় এবং ঘুমকে গভীর করে। তবে নাক ডাকা, বিছানায় নড়াচড়া বা শরীরের তাপমাত্রার পার্থক্যের কারণে ঘুম ব্যাহত হলে, তা সম্পর্কের মানসিক ভারসাম্যেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি উপদেশ দিয়েছেন, যেসব দম্পতি আলাদা ঘুমান, তারা ঘুমানোর আগে একসাথে সময় কাটাতে পারেন—আলাপ, হাসি বা একসাথে বই পড়ার মাধ্যমে সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতা বজায় রাখা সম্ভব।
শেষে তিনি বলেন, ‘সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ঘুমের ধরন হলো সেই ঘুম যা একসঙ্গে মানসম্মত ঘুম, আবেগের সংযোগ এবং দীর্ঘমেয়াদি সুখ নিশ্চিত করে।’
কুশল/সাএ
 সর্বশেষ খবর