দেশের উপকূলীয় সীমান্ত জেলা সাতক্ষীরা, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের নদীয়া ও ২৪ পরগনা জেলার বিস্তৃত সীমান্ত ঘেঁষে রয়েছে এই অঞ্চল। সীমান্তের বৈচিত্র্যময় ভূগোল যেমন যোগাযোগ ও বাণিজ্যের সুযোগ তৈরি করেছে, তেমনি সুযোগ নিয়েছে চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীরা। সীমান্তের বেড়িবাঁধ, গরুর মাঠ, নদীপথ, কাঁটাতারের ফাঁক- সবই হয়ে উঠেছে চোরাচালানের রুট।
সম্প্রতি সীমান্তে পরিচালিত বিজিবি'র বিশেষ অভিযানে বেরিয়ে এসেছে এক চমকপ্রদ তথ্য- মাত্র তিন মাসে (১ আগস্ট থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত) একুশ কোটি টাকারও বেশি মূল্যের ভারতীয় মাদক ও চোরাচালানী পণ্য জব্দ করেছে সাতক্ষীরা ব্যাটালিয়ন (৩৩ বিজিবি)।
গত তিন মাসে বিজিবির প্রতিবেদনে দেখা যায়, সাতক্ষীরা ও কলারোয়া সীমান্তে পৃথক অভিযানে ১২ জন চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীকে আটক করেছে। অভিযানে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০ কোটি ৯৪ লাখ ৮৪ হাজার ৭৫৮ টাকার ভারতীয় পণ্য ও মাদকদ্রব্য।
জব্দকৃত পণ্যের তালিকাটি বেশ দীর্ঘ। এর মধ্যে রয়েছে- আগরবাতি, কীটনাশক, খৈল, থ্রি-পিস, ব্লাউজ, সেলাই মেশিন, মোটরসাইকেল, দুধ, ইঁদুরনাশক, ট্রাক, মোবাইল ফোন, বিড়ি, প্রেসার কুকার, শাল, প্রসাধনী, শাড়ি, ঔষধ, বোরকা ইত্যাদি। আর মাদকদ্রব্যের মধ্যে রয়েছে- হেরোইন, গাঁজা, ইয়াবা, ফেনসিডিল, মদ, নেশাজাতীয় সিরাপ, ক্যাটাগ্রা ট্যাবলেট, সিন্ডেনাফিল ও টেপাডল ট্যাবলেট।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, এসব পণ্য ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বাংলাদেশে পাচার করে এনে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছ। যা একদিকে সরকারকে রাজস্ব বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে ধ্বংস করছে তরুণ সমাজের ভবিষ্যৎ।
অনুসন্ধ্যানে জানা গেছে- সাতক্ষীরার সীমান্তঘেঁষা গ্রামগুলোতে হরহামেশাই চলে মাদক ও চোরাচালানের অন্ধকার বাণিজ্য। সীমান্তের কিছু দুষ্ট চক্র বহুদিন ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। তারা প্রভাবশালী ও বিত্তশালী হয়ে উঠেছে। কিন্তু বিজিবির সাম্প্রতিক কঠোর অভিযানে তারা আত্মগোপনে চলে গেছে।
৩৩ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মো. আশরাফুল হক জানান, মাদক ও চোরাচালান দমনে বিজিবি এখন ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ গ্রহণ করেছে। আমরা গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিদিনই ছোট-বড় অভিযান পরিচালনা করছি। মাদকবিরোধী এ লড়াইয়ে জনগণের সহযোগিতা আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি।
বিজিবির তথ্য অনুযায়ী, জব্দকৃত মাদকদ্রব্য সাধারণ ডায়েরি করে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে জমা রাখা হয়েছে, যা পরবর্তীতে জনসম্মুখে ধ্বংস করা হবে। আর উদ্ধারকৃত চোরাচালানী মালামাল যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া শেষে সাতক্ষীরা কাস্টমসে হস্তান্তর করা হয়েছে।
বিজিবির অভিযান নিঃসন্দেহে একটি বড় সাফল্য। একুশ কোটি টাকার অবৈধ পণ্য জব্দ মানে রাষ্ট্রীয় রাজস্ব রক্ষা, সামাজিক স্থিতি বজায় রাখা এবং তরুণ প্রজন্মকে মাদকের ছোবল থেকে রক্ষা করা। তবে এই সাফল্যকে স্থায়ী করতে হলে প্রয়োজন সামাজিক সচেতনতা, সীমান্ত প্রযুক্তি ব্যবস্থার উন্নয়ন ও স্থানীয় পর্যায়ে বিকল্প জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি। সীমান্তের এই অন্ধকার ব্যবসা থামাতে বিজিবির পাশাপাশি সমাজের প্রতিটি নাগরিকের সক্রিয় ভূমিকা এখন সময়ের দাবি।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর