সারা দেশের মত বরিশালেও ৯ মাস থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত প্রায় ২৩ লাখ শিশুকে সাফল্যজনকভাবে টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা প্রদান সম্পন্ন হয়েছে।
গত ১২ অক্টোবর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত ১৮ কর্ম দিবসে ২২ লাখ ৯০ হাজার ১৫৩ শিশুকে টাইফয়েড কনজুগেট টিকা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রারবিপরিতে অতিরিক্ত প্রায় ২ হাজার শিশুকে এ টিকবা প্রদান সম্পন্ন হয়েছে। বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে এ তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
গত ১২ অক্টোবর থেকে বরিশাল অঞ্চলেরও সব প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ইপিআই কেন্দ্রসমুহে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে এ টিকা প্রদান কার্যক্রম মরনু হয়। গত ১২ অক্টোবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক ই আজম-বীর প্রতীক বরিশাল সরকারি বালিকা বিদ্যালয়ে এ টিকা প্রদান কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেছিলেন।
এ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বরিশালের ৪২টি উপজেলায় ১৩ নভেম্বর সন্ধ্যা পর্যন্ত ২২ লাখ ৯২ হাজার ১শ শিশুকে টাইফয়েডের টিকা প্রদান সম্ভব হয়েছে। বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের মতে, টিকা প্রদানের হার ছিল লক্ষমাত্রার ১০০.০৮ভাগ।
তবে সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী বরিশাল জেলায় টিকা প্রদানের হার লক্ষ্যমাত্রার শতভাগেরও বেশী। আর সবচেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিল পিরোজপুর জেলা। সেখানে লক্ষ্যমাত্রার ৯৩.০৭ ভাগের বেশী টিকা প্রদান সম্ভব হয়নি।
পটুয়াখালীতে ৯৮.৭০%, বরগুনাতে ৯৯.৫৪%, ভোলাতে ৯৯.৯৩%, ঝালকাঠীতে ৯৯.৯৪% টিকা প্রদান সম্ভব হয়েছে। তবে বরিশাল মহানগরীতে ৯৯.৮৮ ভাগ শিশুকে টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা প্রদান করা সম্ভব হয়েছে।
বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউনিসেফ সহ কয়েকটি আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য ও মানবিক সাহায্য সংস্থার সহায়তায় এবারই প্রথম সরকার টাইফয়েড টিকা সংগ্রহ করে তা মাঠ পর্যায়ে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে শিশুদের মাঝে প্রয়োগের পদক্ষেপ গ্রহণ করে।
তবে বাংলাদেশে ব্যবহৃত টাইফয়েড কনজুগেট টিকা কোনো প্রাণিজ উৎস থেকে সংগৃহীত নয় এবং তাতে নেশাকর কোনো পদার্থ নেই বিধায় তা সম্পূর্ণ ‘তাহির’ বা হালাল বলেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে।
ইতঃপূর্বে সারা দেশের মতো বরিশালেও কন্যা শিশুদের জন্য জরায়ুমুখ ক্যন্সার প্রতিরোধী টিকা প্রদান করেছে সরকার। বিনামূল্যে প্রদত্ত ঐসব টিকা প্রদানের ফলে এ অঞ্চলের বিপুলসংখ্যক কন্যাশিশু ভবিষ্যতে জরায়ুমুখ ক্যন্সার থেকে সুরক্ষিত থাকবে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আশাবাদ ব্যক্ত করেছে।
ইউনিসেফ ও বিশ্বের স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা এবং পরামর্শে এই প্রথমবারের মত প্রাক-প্রাথমিক থেকে ৯ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত সব ছাত্রÑছাত্রীকে নিজ নিজ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই ‘টাইফয়েড জ¦র’ প্রতিরোধী টিকা প্রদান করা হল।
এমনকি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাইরে সম বয়েসী সব শিশুকেও ইপিআই কেন্দ্রে টিকা প্রদান করা হয়েছে। জন্ম নিবন্ধন সনদের ১৭ সংখ্যা দিয়ে অন লাইনে রেজিস্ট্রেশন করে যেকেন শিশুই বিনামূল্যে টাইফয়েডের টিকা গ্রহণ করতে পেরেছেন।
‘দ্যা গ্লোবাল বার্ডেন অফ ডিজিজ’ এর সমীক্ষা অনুযায়ী, ২০২১ সালে বাংলাদেশে প্রায় ৪ লাখ ৭৮ হাজার মানুষ টাইফয়েড জ¦রে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় ৮ হাজার জনের। আক্রান্ত ও মৃতদের ৬৮ ভাগই শিশু এবং তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ১৫ বছরের নিচে।
টাইফয়েড জ্বর ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সৃষ্ট একটি সংক্রমক রোগ। মূলত দুষিত পানি ও খাবারের মাধ্যমে এ রোগের জীবাণু মানুষের শরীরে প্রবেস করে। সময়মতো চিকিৎসা গ্রহণ না করলে টাইফয়েড রোগীদের জীবন হুমকির মুখেও পরে।
তবে এক ডোজ ‘টাইফয়েড কনজুগেট ভ্যাকসিন’ গ্রহণের মাধ্যমে টাইফয়েড জ্বর প্রতিরোধ করা সম্ভব বলে চিকিৎসা বিজ্ঞানীগণ জানিয়েছেন। চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, টাইফয়েড জ¦র একটি প্রতিরোধযোগ্য সংক্রমক রোগ।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৯-এর তথ্যনুযায়ী, প্রতি বছর বিশ্বে^ ৯০ লাখ মানুষ টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ১ লাখ ১০ হাজার জনের মৃত্যু হয়ে থাকে।
আক্রান্ত ও মৃত্যু বরনকারীদের অধিকাংশই পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশ-নেপাল ও ভুটান সহ দক্ষিণ এশিয়া ও সাব-সাহরান আফ্রিকা অঞ্চলের। বিশ্বে স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বের উন্নত দেশসমুহে টাইফয়েড-এর প্রাদুর্ভাব অনেকাংশে কমে এলেও বাংলাদেশ সহ অনেক উন্নয়নশীল দেশে এখনো অন্যতম প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে।
পাকিস্তানই বিশ্বের প্রথম দেশ যারা ২০১৯ সালেই তাদের নিয়মিত টিকাদান কর্মসূচিতে টাইফয়েড প্রতিরোধী টিকা প্রদান শুরু করে এবং তাদের প্রাথমিক প্রচারণার হার ছিল ৯৫ ভাগ।
টাইফয়েড জ্বরের মত প্রাণঘাতী একটি রোগ থেকে আমাদের শিশু সহ ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আজীবন নিরাপদ রাখতে এক ডোজ টিকা গ্রহণের কোনো বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় পরিচালক ডা. শ্যামল কৃষ্ণ মন্ডল।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর