যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) একাডেমিক ভবনগুলোতে দীর্ঘদিন ধরে পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টারগুলো অকেজো হয়ে পড়ে থাকা, টয়লেটগুলোর দরজা, পানির ট্যাপ, ফ্ল্যাশ ও লাইট না থাকা এবং স্যানিটেশনের সমস্যা সমাধানে উদাসীনতা ও গাফলতির অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তর ও স্টেট শাখার বিরুদ্ধে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার আঠারো বছরে একবারও পানির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হয়েছে কিনা জানেন না যবিপ্রবি প্রশাসন ও দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, নয়তলা বিশিষ্ট জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম একাডেমিক ভবন ও পাঁচতলা বিশিষ্ট মাইকেল মধুসূদন দত্ত কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার কাম একাডেমিক ভবনের প্রতি তলাতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জন্য একটি করে পানির ফিল্টার দেওয়া হয়েছিল। অথচ প্রতি তলাতে শিক্ষার্থী সংখ্যা ৩০০-৪০০ জন। প্রায় পাচটি ফ্লোরের ফিল্টার অচল অবস্থায় রয়েছে। যে ফিল্টার গুলো সচল অবস্থায় রয়েছে, সেগুলোর কিটগুলোত ময়লা ও জীবাণুর কালো স্তর পড়ে আছে। পানি প্রবাহিত হচ্ছে তুলনামূলক ধীরগতিতে। নেই পানি পান করার মতো গ্লাস বা প্রয়োজনীয় উপকরণ। নামমাত্র বিশুদ্ধ পানির নামে শিক্ষার্থীদের পান করানো হচ্ছে ট্যাপের পানি।কোন কোন ফিল্টারের কিটে সবুজ রঙের শেওলার স্তর দেখা গেছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলগুলোর পানি বিশুদ্ধকরণ ফিল্টারগুলোর একই অবস্থা বলে জানা যায়।
এদিকে একাডেমিক ভবন, লাইব্রেরি ভবন ও মেডিক্যাল সেন্টারের টয়লেট, ভেসিন, অজুখানাগুলো প্রায় সময়ই থাকে অপরিচ্ছন্ন। বেশিরভাগ টয়লেটেই পাওয়া যায়নি কোন লাইট। কোনো কোনো টয়লেট ও বেসিনে নেই পানির ট্যাপ। শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ টয়লেটের ফ্ল্যাশসমূহ নষ্ট পাওয়া যায়। প্রায় সময় টয়লেটগুলো থেকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। সাবান ও হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা না থাকায় স্বাস্থ্য ঝুকিতে রয়েছে শিক্ষার্থীরা। দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার করা হয়না ভবনগুলোতে পানি সরবরাহকারী ট্যাংকগুলো, ফলে বেশিরভাগ সময় ট্যাপগুলো থেকে ময়লাযুক্ত পানি আসতে দেখা যায়। এছাড়া বেশিরভাগ সময় ল্যাবের যন্ত্রপাতি ও পরিচ্ছন্নতার কাজ করে এসব ময়লাযুক্ত পানি দিয়ে। তাছাড়া, শিক্ষক ডরমেটরির ভবনের পানির ট্যাংকগুলো দীর্ঘদিন ধরে পরিষ্কার না করায় এলার্জি ও পানিবাহিত রোগ সংক্রমণ করারও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টার, স্যার জগদীশ চন্দ্র বসু একাডেমিক ভবনের ক্ষেত্রেও এসব অভিযোগ পাওয়া যায়।
যবিপ্রবির জিইবিটি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মো: সামিউল আলিম সামি বলেন, ফিল্টার কিটগুলো কালো হওয়ার কারণে শিক্ষার্থীরা এখান থেকে পানি নেয় না। শিক্ষার্থীরা উপর থেকে পানি নিয়ে আসে। ফিল্টার আদৌ কাজ করে নাকি নামমাত্র সাজানো আছে তা বোঝা যায় না। টয়লেট- বেসিন গুলো সবসময় ব্যবহারের অনুপযুক্ত থাকে। এগুলো নিয়ে অনেকবার বলা হলেও ফলাফল শুন্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের এফএমবি বিভাগের ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী মো: কবিরুল ইসলাম বলেন,আমাদের ফ্লোরের টয়লেটগুলোর অবস্থা অত্যন্ত করুন। অন্য তলায় গিয়ে দেখি সেগুলোর অবস্থা ও একই রকম। টয়লেটে নেই সাবান হ্যান্ডওয়াশের ব্যবস্থা।বাসা থেকে সাবান এবং হ্যান্ডওয়াশ নিয়ে আসা আমাদের পক্ষে সম্ভব হয় না। একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ ধরনের সেবা আশা করি না।কর্তৃপক্ষের উচিত দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে স্বাস্থ্যসম্মত ও শিক্ষার্থীবান্ধব পরিবেশ তৈরি করা।
শিক্ষার্থীরা আক্ষেপের স্বরে বলেন, শিক্ষার্থীদের সু-স্বাস্থ্যের বিষয়টি কি প্রশাসন কখনোই আমলে নেবে না? দীর্ঘদিনের এই সমস্যা কি আদৌ আলোর মুখ দেখবে? ফিল্টার দিয়ে আর কত জীবাণুযুক্ত পানি গেলে প্রশাসনের নজর কাড়বে?
স্যানিটেশনের বিষয়ে যবিপ্রবির স্টেট শাখার ডেপুটি রেজিস্ট্রার মোঃ জাহাঙ্গীর কবির বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবনসহ সব স্থানে ডিন অফিস ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের অধীনে কর্মরত ক্লিনাররা প্রতিদিন নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। নিরাপত্তা শাখার কর্মকর্তা এবং ক্লিনার সুপারভাইজাররা পুরো কার্যক্রম নিয়মিত মনিটরিং করছেন, যাতে শিক্ষার্থীরা একটি পরিচ্ছন্ন পরিবেশ পেতে পারে। তবুও কোথাও কোনো সমস্যা দেখা দিলে তা দ্রুত মনিটরিং ও ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে সমাধান করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সচেতনতা ও সহযোগিতা গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের স্টোরে স্যানিটেশন সামগ্রী মজুদ থাকা সাপেক্ষে নিয়মিত সরবরাহ করা হয়, এবং কোথাও ঘাটতি দেখা দিলে তাৎক্ষণিকভাবে প্রয়োজনীয় সামগ্রী সরবরাহ করা হবে।
ফিল্টারগুলোর সমস্যা এবং টয়লেটগুলোর দরজা, পানির ট্যাপ, ফ্ল্যাশ ও লাইট না সঠিকভাবে সরবরাহ না করার অভিযোগের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলী ইঞ্জি. মোঃ সালমান সাকিব বলেন, অনেকগুলো ফিল্টার থাকায় সঠিকভাবে তদারকি করা সম্ভব হয় না অনেক সময়। আগামীকালের মধ্যে স্টোরে সরঞ্জামাদি দিয়ে জরুরি কাজ গুলো সম্পন্ন করব এবং অর্থ প্রাপ্তি সাপেক্ষে সবগুলো বিষয়ই দ্রুত সমাধান করব। এছাড়া প্রধান প্রকৌশলীর সাথে কথা বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পানির বিশুদ্ধতা পরীক্ষা করা হবে।
কুশল/সাএ
সর্বশেষ খবর