ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) বা অবৈধ ফোন বন্ধের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সারা দেশের সাধারণ মোবাইল ব্যবসায়ীদের দোকান বন্ধ রাখলেও, আন্দোলনের নেতৃত্ব দেয়া প্রভাবশালী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
অভিযোগ উঠেছে, শীর্ষস্থানীয় গ্যাজেট বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ‘আপেল গ্যাজেট’ এবং ‘সুমাস টেক’ শো-রুম বন্ধ বললেও অনলাইনে অর্ডার নিচ্ছে এবং সরাসরি গ্রাহকের বাসায় ‘হোম ডেলিভারি’ সুবিধা দিচ্ছে।
সোমবার রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীরা নেতাদের নির্দেশে দোকান বন্ধ রেখেছেন। অথচ ফেসবুকে ও হটলাইনে যোগাযোগ করে জানা গেছে, আপেল গ্যাজেট ও সুমাস টেক পুরোদমে তাদের বিক্রয় কার্যক্রম সচল রেখেছে।
শটার বন্ধ, ডেলিভারি চালু: সরেজমিনে দেখা যায়, যমুনা ফিউচার পার্ক ও মোতালেব প্লাজায় সাধারণ দোকানগুলো বন্ধ। কিন্তু ‘আপেল গ্যাজেট’ ও ‘সুমাস টেক’-এর ফেসবুক পেজে ক্রেতা সেজে যোগাযোগ করা হলে তারা নিশ্চিত করে যে, শোরুম বন্ধ থাকলেও অনলাইন অর্ডার গ্রহণ করা হচ্ছে এবং নিজস্ব ডেলিভারি ম্যান বা কুরিয়ারের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে হোম ডেলিভারি দেওয়া হচ্ছে।
সুমাস টেকের এক বিক্রয়কর্মী ফোনে জানান, ‘স্যার, আমাদের আউটলেট আজ বন্ধ, কিন্তু আপনি ওয়েবসাইটে বা পেজে অর্ডার করলে আমরা আজই হোম ডেলিভারির ব্যবস্থা করে দেব। আমাদের স্টক এভেইলেবল আছে।’ একই চিত্র দেখা গেছে আপেল গ্যাজেটের ক্ষেত্রেও।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত: নেতাদের এমন দ্বিমুখী আচরণে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ ব্যবসায়ীরা। গুলশানের এক ক্ষুদ্র মোবাইল ব্যবসায়ী বলেন, ‘নেতারা আমাদের বললেন ‘অস্তিত্ব রক্ষার আন্দোলন’, তাই দোকান বন্ধ রাখতে হবে। আমরা ছোটরা ভয়ে দোকান খুললাম না। অথচ আপেল গ্যাজেট আর সুমাস টেক ঠিকই অনলাইনে বেচা-বিক্রি করে লাভ করছে। আমাদের পেটে লাথি মেরে তারা নিজেদের পকেট ভারী করছে।’
আরেক ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ‘যাদের অনলাইন সেটআপ বা ই-কমার্স ওয়েবসাইট নেই, তারা আজ পথে বসেছে। আর নেতারা আন্দোলনের সুযোগে কাস্টমারদের সব ট্রাফিক নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে নিচ্ছেন। এটা স্পষ্ট প্রতারণা।’
সিন্ডিকেটের কৌশল বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সিন্ডিকেট নেতাদের একচেটিয়া বাজার দখলের কৌশল-
মার্কেট শেয়ার বৃদ্ধি: সাধারণ দোকান বন্ধ থাকায় ক্রেতারা বাধ্য হয়ে অনলাইনে ঝুঁকছেন। এতে নেতাদের প্রতিষ্ঠানের বিক্রি কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। স্টক ক্লিয়ারেন্স: এনইআইআর পুরোপুরি চালুর আগে তারা নিজেদের মজুদ করা অবৈধ বা গ্রে মার্কেটের পণ্যগুলো হোম ডেলিভারির মাধ্যমে দ্রুত ছেড়ে দিচ্ছেন। নিরাপদ অবস্থান: শোরুম বন্ধ রেখে তারা সরকারকে দেখাচ্ছেন যে তারা আন্দোলনে আছেন, কিন্তু তলে তলে ব্যবসা ঠিকই চালিয়ে যাচ্ছেন।
বিটিআরসি ঘেরাও কর্মসূচির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন: ‘বাংলাদেশ মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি’ নামে একটি সংগঠন বিটিআরসি কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দেয়। তবে সাধারণ ব্যবসায়ীদের প্রশ্ন যারা নিজেরা হোম ডেলিভারি দিয়ে ব্যবসা চালু রেখেছে, তাদের নেতৃত্বে এই আন্দোলন কতটুকু সফল হবে? আপেল গ্যাজেট ও সুমাস টেকের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোর এই সুবিধাবাদী চরিত্রের কারণে সাধারণ ব্যবসায়ীদের মধ্যে ফাটল ধরার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর