ময়মনসিংহের গৌরীপুরে চা দোকানদার হারুন মিয়ার ব্যতিক্রমী ও সমাজসচেতনতামূলক উদ্যোগে বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) অনুষ্ঠিত হয়েছে বর্ষসেরা চা'প্রেমী সম্মাননা অনুষ্ঠান। এ উপলক্ষে "মাদক ছেড়ে চা ধরুন, মোবাইল আসক্তি কমিয়ে বই পড়ুন"—এই স্লোগানে একটি শোভাযাত্রা শহরের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। ২০২৫ সালে প্রতীকীভাবে ২৫ জন চা-প্রেমীকে সম্মাননা প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দিনাজপুর সরকারি কলেজের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বিশ্বজিৎ দাস। স্বজন সমাবেশ কার্যালয়ে আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ইসলামাবাদ ফাজিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ মো. এমদাদুল হক। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন গৌরীপুর মহিলা ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক ও কবি সেলিম আল রাজ।
স্বাগত বক্তব্য রাখেন আয়োজক চা দোকানদার হারুন মিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাবুই প্রকাশনীর সম্পাদক ও শিশু সাহিত্যিক কাদের বাবু, ফুলবাড়ি উপজেলার মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রীতা মন্ডল, ভূটিয়ারকোনা স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ গোলাম মোহাম্মদ, বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. রইছ উদ্দিন, কা লের কণ্ঠ-এর ময়মনসিংহ জেলা প্রতিনিধি আলম ফরাজী, দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটি গৌরীপুর উপজেলা শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক ফারুক আহাম্মদ, গৌরীপুর প্রেস ক্লাবের অর্থ সম্পাদক শামীম খান, স্বজন সমাবেশের সহসভাপতি সহযোগী অধ্যাপক মোশারফ হোসেন সোহেল, প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামার হোসেনসহ আরও অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিশ্বজিৎ দাস বলেন, "হারুন মিয়া গৌরীপুরের একজন আলোকিত মানুষ। একজন চা বিক্রেতা হয়েও তিনি সমাজসচেতনতার বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। নিজ উদ্যোগে পাঠাগার গড়ে তুলে মানুষকে বিনামূল্যে বই পড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। হারুনের মতো তরুণরা সমাজকর্মে যুক্ত থাকলে সমাজ থেকে অন্ধকার দূর হয়ে যাবে।"
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক কাদের বাবু বলেন, "এমন ব্যতিক্রমী ও মানবিক আয়োজনে অতিথি হতে পেরে আমি আনন্দিত। আমরা সবসময় হারুন মিয়ার পাশে থাকবো।" জীবনসংগ্রাম ও সামাজিক উদ্যোগ, হারুন মিয়ার বাড়ি গৌরীপুর পৌর শহরের সতিষা মহল্লায়। ছয় ভাই-বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। মাধ্যমিক পর্যায়ে পড়াশোনার ইতি ঘটলেও ২০১২ সালে গৌরীপুর পৌর শহরের কালীখলা এলাকায় জালাল হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের সামনে (বর্তমানে বিএনপির পার্টি অফিস সংলগ্ন) একটি চা স্টল দিয়ে জীবিকা শুরু করেন। ২০১৭ সাল থেকে তিনি নিয়মিতভাবে তার দোকানের সেরা গ্রাহকদের বর্ষসেরা চা'প্রেমী সম্মাননা প্রদান করে আসছেন। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তি হয়ে পরবর্তীতে একই প্রতিষ্ঠান থেকে এসএসসি উত্তীর্ণ হন। বর্তমানে তিনি ডিগ্রি পর্যায়ে অধ্যয়নরত।
২০২৩ সালে চা স্টলে থাকা শতাধিক বই নিয়ে 'হারুন পাঠাগার' এর যাত্রা শুরু হয়, যা বর্তমানে দেড় হাজারের বেশি বইয়ের সংগ্রহে সমৃদ্ধ। হারুন মিয়ার বাবা পেশায় একজন সবজি বিক্রেতা ছিলেন। ২০২৩ সালে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে তিনি মৃত্যুবরণ করলে পরিবারের দায়িত্ব এসে পড়ে হারুনের ওপর। বর্তমানে মা ও ছোট বোনকে নিয়ে তার তিন সদস্যের পরিবার। ছোট বোন বীনা আক্তার গৌরীপুর সরকারি কলেজে ডিগ্রি দ্বিতীয় বর্ষে অধ্যয়নরত।
মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য অর্ধেক দামে চা বিক্রি, মাদকবিরোধী আন্দোলন, গ্রাহকদের নিয়ে দুর্নীতিবিরোধী কর্মসূচি এবং পাঠাগার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে হারুন মিয়া দেশজুড়ে আলোচনায় আসেন। হারুন মিয়া বলেন, "আমার পাঠাগারে দেড় হাজারের মতো বই রয়েছে। আমার স্বপ্ন পাঠাগারটিকে আরও বড় করা, মানুষের উপকার হয়—এমন কাজে যুক্ত থাকা এবং সব ধরনের অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা।"
মাসুম/সাএ
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর