
ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে চলা অনিয়ম, অবহেলা ও কর্তৃপক্ষের স্বেচ্ছাচারিতার চিত্র উঠে আসার পর অবশেষে নড়েচড়ে বসেছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন। বিডি২৪লাইভ-এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনে উঠে আসে একের পর এক অনিয়ম ও অসঙ্গতি।
দীর্ঘদিন ধরে অফিস না করে সরকারি বেতন তোলার অভিযোগে আলোচনায় আসে আয়া আরিফা আক্তার, যা তীব্র সমালোচনা ও ক্ষোভের জন্ম দেয় জনমনে।
তবে এ অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় গত ২২ এপ্রিল অভিযুক্ত আরিফা আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ (শোকজ) দিয়েছিল হাসপাতাল প্রশাসন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত আরিফা আক্তার শোকজের জবাব দিয়েছেন, তবে হাসপাতাল প্রশাসন পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে কতটা সক্ষম হবে, তা সময়ই বলে দেবে। দীর্ঘদিনের এই অপরাধের শাস্তি যেন ‘গুরু পাপে লঘু দণ্ড’ না হয়—এমনই প্রত্যাশা এলাকাবাসীর।
হাসপাতালে কর্মরত একটি দীর্ঘদিনের ‘সিন্ডিকেট’ ও কিছু কর্মচারীর একচ্ছত্র প্রভাব সামলিয়ে হাসপাতালের অন্যান্য বেশ কিছু অনিয়মের বিষয়ে গৃহীত পদক্ষেপ কিছুটা ফলপ্রসূ হলেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আয়া আরিফা আক্তার।
জানা গেছে, হাসপাতাল নিয়ে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ফলে বেশ কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। চারজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট থাকলেও পুরুষ দুইজন দীর্ঘদিন পর এখন হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করছেন। তবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তারা থাকলেও হাসপাতাল প্রশাসনের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে নেই। চেম্বার ব্যবসাই যেন মুখ্য বিষয়।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নড়েচড়ে বসেছেন চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মচারীরা। আপাতত সবাই দায়িত্বের প্রতি আন্তরিকতা দেখালেও নিজ নিজ দায়িত্বের প্রতি কতদিন তাদের এমন মনোযোগ থাকবে, তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা।
এছাড়াও নগরকান্দা উপজেলার জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি অ্যাম্বুলেন্স সেবাতেও রয়েছে নানা অনিয়মের অভিযোগ। উপজেলার সর্বত্র সেবা দেওয়ার কথা থাকলেও এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রত্যন্ত এলাকার বাসিন্দারা। জরুরি প্রয়োজনে ফোন করলেও বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে এড়িয়ে যান অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীর। আবার যারা সেবা পাচ্ছেন, তাদের কাছ থেকে নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে বেশি অর্থ নেওয়ার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।
নগরকান্দা থেকে ফরিদপুর সদর পর্যন্ত সরকার নির্ধারিত ভাড়া ৫৮০ টাকা হলেও রোগীর স্বজনদের গুণতে হয় ১০০০–১২০০ টাকা।
নগরকান্দা থেকে শওকত হোসাইন নামে এক ভুক্তভোগী জানান, চলতি বছরের ২০ মার্চ তিনি রোগী নিয়ে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। তখন তার কাছ থেকে ১০০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হয় এবং আগেই টাকা জমা দিতে বলা হয়েছিল।
মো. রবিন ইসলাম নামে আরও এক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ১০০০ টাকার কমে ভাড়া নেয় না, এবং হাসপাতালের বাইরের রোগী তো নিতেই চায় না। এতে রোগী ও স্বজনদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়।
তবে এ বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত অ্যাম্বুলেন্স চালক জাহাঙ্গীরের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে নগরকান্দা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জয়দেব কুমার সরকার বলেন, “আরিফা আক্তার শোকজের জবাব দিয়েছেন। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। হাসপাতালের অন্যান্য অনিয়মের বিষয়েও ধাপে ধাপে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।”
এদিকে ফরিদপুরের সিভিল সার্জন ডা. মাহমুদুল হাসান বলেন, “আয়া আরিফা আক্তার শোকজের জবাব দিয়েছেন। চাকরির নীতিমালা অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আপনাদের লেখালেখির মাধ্যমেই অনিয়মগুলো উঠে এসেছে। আমরা ধাপে ধাপে সব অনিয়মের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নিচ্ছি।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর