
জাতীয় পরিচয়পত্রে পিতা-পুত্রের বয়সের গরমিল নিয়ে এলাকায় হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে চলছে নানা রকম রসাত্মক আলোচনা। এই ভুল সংশোধনের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেও কোনো সমাধান পাচ্ছেন না ভুক্তভোগী পরিবার। এনআইডিতে বয়সের গরমিলের কারণে স্কুল-মাদ্রাসায় ছেলে-মেয়েকে ভর্তি করাতে পারছেন না জিতু মিয়া, ফলে তিনি চরম বিপাকে পড়েছেন।
জন্মনিবন্ধন নিয়েও দেখা দিয়েছে জটিলতা। তিন মাসেও সংশোধন হয়নি জন্মনিবন্ধন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় কালিয়ারভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের জন্য আবেদন করেন তিনি। গতকাল মঙ্গলবার তিনি আবারও নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন।
জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, জিতু মিয়া তার বাবা হারিছ মিয়ার চেয়ে ৬৩ বছর বড়! পিতা হারিছ মিয়ার জন্ম তারিখ ১৯৫০ সালের ১ মার্চ, আর ছেলে জিতু মিয়ার জন্ম তারিখ দেখানো হয়েছে ১৮৮৭ সালের ২ মার্চ! সে হিসেবে বাবার বয়স বর্তমানে ৭৫ বছর ৩ মাস ১২ দিন, আর ছেলের বয়স ১৩৮ বছর ২ মাস ৫ দিন। অর্থাৎ ছেলের বয়স বাবার চেয়ে ৬৩ বছর ২ মাস বেশি!
বর্তমানে জিতু মিয়ার সঠিক জন্মতারিখ ১৯৮৭ সালের ২ মার্চ, তবে ভুলবশত এনআইডিতে তা ১৮৮৭ সাল লেখা হয়েছে।
ভুক্তভোগী জিতু মিয়া বলেন, “১৫-২০ বছর আগে আমি বিদেশে ছিলাম। তখন দালালের মাধ্যমে হাতে লেখা পাসপোর্ট করেছিলাম। সেই পাসপোর্টে ও এনআইডিতে মিল ছিল না। বর্তমানে আমার ১২ বছরের ছেলেকে মাদ্রাসায় ভর্তি করাতে গেলে এনআইডিতে ১৩৮ বছরের বয়স দেখা যায়। এতে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ ভর্তি নেয়নি। ২০২৫ সালের চার মাস পার হয়ে গেলেও জন্মনিবন্ধন সঠিক না হওয়ায় আমার মেয়ে পর্যন্ত ভর্তি হয়নি।”
তিনি আরও বলেন, “আমি লেখাপড়া করিনি, তাই বুঝিনি এত বড় ভুল হবে। আমার সঠিক বয়স ৩৮ বছর ২ মাস। এনআইডি সংশোধনের জন্য তিন মাস আগে ইউনিয়ন পরিষদ ও নির্বাচন অফিসে গিয়েছি, চেয়ারম্যান সাহেবের কাছেও আবেদন করেছি। সংশোধনের জন্য টাকা খরচ করেছি কিন্তু কোনো ফল পাইনি। আজ (মঙ্গলবার) হবিগঞ্জ কোর্টে এফিডেভিট করে নবীগঞ্জ ইউএনও’র কাছে আবার আবেদন করেছি। এরপর নির্বাচন অফিসার বলছেন ঠিক করে দেবেন। চার মাস ধরে ছেলে-মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করাতে পারছি না।”
জিতু মিয়ার বাবা হারিছ মিয়া বলেন, “ছেলের বয়স বেশি দেখানোর জন্য মানুষ নানা রকম হাসাহাসি করে। এই এনআইডি কার্ড দিয়ে কোনো কাজই করতে পারছে না। এই ভুল ঠিক করাতে গিয়েই বাপ-বেটার জান শেষ।”
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিন বলেন, “জাতীয় পরিচয়পত্রে বয়স ভুল যাদের রয়েছে, তা সংশোধনের জন্য উপযুক্ত ডকুমেন্ট ছাড়া কিছু করার নিয়ম নেই। ওই ব্যক্তি অনলাইনে আবেদন করলেও কোনো ডকুমেন্ট দেননি। তিনি লেখাপড়া করেননি, তাই শিক্ষাগত সনদও নেই। আমরা তাকে সিভিল সার্জনের কাছ থেকে মেডিকেল রিপোর্ট এনে দিতে বলেছি। সেটা পেলে জন্মনিবন্ধন সংশোধনের চেষ্টা করব। আমরা বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছি।”
ভুলের কারণ জানতে চাইলে নবীগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা উত্তম কুমার দাস বলেন, “মূলত ২০০৭ সালে যখন সার্ভারে ভোটার তালিকা তৈরি হয়েছিল, তখনই বয়স সংক্রান্ত এই ভুল হয়েছে। এখন জন্মনিবন্ধন ছাড়া সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। সংশোধিত অনলাইন জন্মনিবন্ধনের কপি আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে হবে। সংশোধনের আবেদন আমরা পেয়েছি, কিন্তু জন্মনিবন্ধন ছাড়া কিছু করা যাবে না।”
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর