
জলবায়ুর ক্রমাগত উষ্ণতা বৃদ্ধি বিশ্বজুড়েই উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এর প্রভাব পড়ছে বাংলাদেশেও। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলমান তীব্র তাপপ্রবাহে নাজেহাল হয়ে পড়েছে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীকুল। বাড়ছে রোগবালাই, বাধাগ্রস্ত হচ্ছে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা।
চলতি মাসে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে চুয়াডাঙ্গা জেলায়, এরপর রয়েছে যশোর। এসব অঞ্চলের মানুষ—বিশেষ করে নারী, শিশু ও বয়স্করা—তীব্র গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। ডায়রিয়া, আমাশয় ও গরমজনিত অন্যান্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালগুলোতে রোগীর ভিড় বেড়েছে।
এদিকে সরকারের পক্ষ থেকে তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জনসচেতনতামূলক নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, বিশুদ্ধ পানি বেশি করে পান করতে, হালকা ও ঢিলেঢালা জামা-কাপড় পরতে, ঘন ঘন গোসল করতে এবং বাসি ও খোলা খাবার এড়িয়ে চলতে। এছাড়া ঘরের ভেতরের তাপমাত্রা কমাতে ছাদে পানি ঢালা ও জানালা খোলা রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে শিশু, বয়স্ক, গর্ভবতী নারী, রিকশাচালক, নির্মাণ শ্রমিক ও উচ্চ রক্তচাপ বা হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের। অসুস্থতা বোধ করলে দেরি না করে নিকটস্থ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার এবং যেকোনো স্বাস্থ্য-পরামর্শের জন্য ১৬২৬৩ নম্বর “স্বাস্থ্য বাতায়ন”-এ যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে।
নাসার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জলবায়ু পরিবর্তন একটি ধীর কিন্তু স্থায়ী প্রক্রিয়া। এই পরিবর্তনের পেছনে সবচেয়ে বড় কারণ হলো বায়ুমণ্ডলে অতিরিক্ত গ্রিনহাউস গ্যাস, যেমন কার্বন ডাই-অক্সাইড ও মিথেন, যেগুলো সূর্যের তাপকে পৃথিবীতে আটকে রাখে। কয়লা ও তেলজাত জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ বাড়ছে, ফলে পৃথিবীর উষ্ণতাও বাড়ছে।
তাপমাত্রা বৃদ্ধির আরও কিছু মানবসৃষ্ট কারণও রয়েছে—যেমন যথাযথভাবে গাছ না লাগানো, প্রাপ্তবয়স্ক গাছ কেটে ফেলা, কল-কারখানার কালো ধোঁয়া ও বর্জ্য, এবং প্লাস্টিক ও পলিথিনের অতিরিক্ত ব্যবহার।
জলবায়ু ও পরিবেশবিদদের মতে, এপ্রিল ও মে মাসে বাংলাদেশ সূর্যের অধিক নিকটে থাকায় স্বাভাবিকভাবেই গরম বেড়ে যায়। কিন্তু চলতি বছরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি। এরই মধ্যে গার্মেন্টস কর্মীসহ কয়েকজন শ্রমজীবী মানুষ এই তাপপ্রবাহে প্রাণ হারিয়েছেন।
বাংলাদেশসহ আশপাশের দেশগুলোকে এই তাপপ্রবাহ মোকাবেলায় সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য বসবাসযোগ্য একটি পৃথিবী গড়ে তুলতে হলে এখনই প্রয়োজন সচেতনতা, ঐক্য ও বাস্তবভিত্তিক পদক্ষেপ।
সর্বশেষ খবর