
দীর্ঘদিন পর হঠাৎ করেই বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনাভাইরাস ও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এর প্রভাব ইতোমধ্যে বাংলাদেশেও পড়তে শুরু করেছে। গত মাস থেকেই দেশে করোনা ও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। চলতি মাসেও এই দুটি রোগে আক্রান্ত হয়ে অন্তত ৫০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে স্বাস্থ্য দপ্তরের সূত্র জানিয়েছে।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে করোনা প্রতিরোধে ১১ দফা নির্দেশনা ঘোষণা করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে—সব সরকারি হাসপাতালে করোনার জন্য পৃথক শয্যা প্রস্তুত রাখা, মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, জনসমাগম এড়িয়ে চলা এবং বিদেশফেরত ব্যক্তিদের বিষয়ে বিশেষ নজরদারি। তবে কেবল নির্দেশনা দিলেই হবে না; এসবের কার্যকর বাস্তবায়ন নিশ্চিত করাও অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর উভয়ই মনে করছে—বর্তমানে সংক্রমণ বাড়লেও তা নিয়ে এখনই আতঙ্কিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। তবে এই আত্মতুষ্টিও বিপজ্জনক হতে পারে। অতীতে আমরা দেখেছি, করোনা ভয়াবহ রূপ নেওয়ার আগপর্যন্ত অনেকেই বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি। এবার সেই ভুল যেন না হয়।
বিশেষ করে বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষকে কঠোর নজরদারির মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত ও আলাদা করতে হবে। করোনা মোকাবিলায় জনসচেতনতা সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। আগে থেকেই মানুষ এই ভাইরাস সম্পর্কে মোটামুটি সচেতন, এখন প্রয়োজন দায়িত্বশীল আচরণ ও পারস্পরিক সহমর্মিতা।
এদিকে জলবায়ু পরিবর্তন ও নগরায়নের প্রভাবেও দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়েছে। একসময় মৌসুমি রোগ হিসেবে পরিচিত ডেঙ্গু এখন প্রায় সারা বছরই চোখে পড়ছে। এডিস মশার আচরণেও এসেছে পরিবর্তন—এখন এটি প্রতিকূল পরিবেশেও টিকে থাকতে পারছে। মশক নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার কারণেই রাজধানীসহ সারাদেশে এডিস মশার ঘনত্ব বেড়েছে।
সম্প্রতি ঈদুল আজহার আগে রাজধানীতে পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, প্রতি ১৫টি বাড়ির মধ্যে ৮-৯টিতে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। এটি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। মশার বিস্তার রোধে স্থানীয় সরকার ও সিটি কর্পোরেশনগুলোর পাশাপাশি নাগরিকদেরও দায়িত্বশীল হতে হবে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর গত ১১ জুন জানান, ইতোমধ্যে ১৭ লাখ ডোজ করোনা টিকা বিভিন্ন কেন্দ্রে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে করোনা শনাক্তকরণ কিট এবং ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
সবশেষে বলতে হয়, করোনা ও ডেঙ্গুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো জনসচেতনতা। কেবল সরকারি উদ্যোগ নয়, জনগণের অংশগ্রহণ এবং সচেতন আচরণই পারে এ সংকট মোকাবিলা করতে। ২০২০ সালে আমরা দেখেছি, কীভাবে অসচেতনতা প্রাণঘাতী হতে পারে।
তাই এখনই সময়—সচেতন হওয়ার, সতর্ক থাকার।
সচেতন হোন, সুস্থ থাকুন।
সর্বশেষ খবর