
টানা দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের সেরা বৈজ্ঞানিক জার্নালের স্বীকৃতি অর্জন করেছে ‘জার্নাল অব অ্যাডভান্সড ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল রিসার্চ’ (জাভার)। ওয়েব অব সায়েন্সের তথ্য অনুযায়ী, এটি বর্তমানে বাংলাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টরপ্রাপ্ত জার্নাল। একইসঙ্গে, স্কোপাসের মূল্যায়নে বাংলাদেশের একমাত্র কিউ২ ক্যাটাগরির জার্নাল হিসেবে শীর্ষ অবস্থান ধরে রেখেছে এটি।
বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) জাভারের প্রধান সম্পাদক এবং বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. কে. এইচ. এম. নাজমুল হুসাইন নাজির বিষয়টি নিশ্চিত করেন। এই জার্নালের সম্পাদকীয় বোর্ডে বাংলাদেশ ছাড়াও যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ভারত, মালয়েশিয়া, মিশর, জর্ডান এবং নাইজেরিয়ার গবেষকরা যুক্ত রয়েছেন।
অধ্যাপক নাজমুল জানান, ২০১৪ সালের মার্চে জাভার যাত্রা শুরু করে। বাকৃবির কয়েকজন শিক্ষক-গবেষকের নেতৃত্বে এবং নেটওয়ার্ক ফর দ্য ভেটেরিনারিয়ানস অফ বাংলাদেশ (বিডিভেটনেট)-এর উদ্যোগে এর প্রথম সংখ্যা প্রকাশিত হয়। শুরু থেকেই প্রতি বছর চারটি সংখ্যা প্রকাশ করা হচ্ছে, যেখানে গড়ে ১২০-১৩০টি গবেষণাপত্র স্থান পায়।
তিনি আরও বলেন, জার্নালটির সম্পাদনায় লেখক ও পর্যালোচকদের পরিচয় গোপন রাখা হয়, যা একটি আন্তর্জাতিক মানের জার্নালের জন্য আবশ্যকীয় বৈশিষ্ট্য। জাভার বর্তমানে স্কোপাস, ওয়েব অব সায়েন্স (ইএসসিআই), পাবমেড সেন্ট্রাল, ডিওএজে, অ্যাগ্রিস, ক্যাবিআই এবং বাংলা জেএওএল-এ তালিকাভুক্ত। ২০২৪ সালের সূচক অনুযায়ী স্কোপাস সাইটস্কোর ২.৭, এসজেআর (এসসিআইম্যাগো জার্নাল র্যাঙ্ক) ০.৩৯৮ এবং এইচ ইনডেক্স ২৪।
জাভারের বর্তমান ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর ১.৫, যা ২০২৩ ও ২০২৪ উভয় বছরেই ধরে রেখেছে। বাংলাদেশে প্রায় ৩০০টির বেশি বৈজ্ঞানিক জার্নাল থাকলেও, মাত্র ৬টি ওয়েব অব সায়েন্সে তালিকাভুক্ত, যার মধ্যে জাভারের ইমপ্যাক্ট ফ্যাক্টর সর্বোচ্চ।
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ বৈজ্ঞানিক ডেটাবেস স্কোপাসে তালিকাভুক্ত বাংলাদেশের ১৩টি জার্নালের মধ্যে জাভার একমাত্র কিউ২ (কোয়ার্টাইল ২) র্যাংক অর্জন করেছে এবং টানা দ্বিতীয় বছর সেই অবস্থান ধরে রেখেছে। এছাড়া স্কোপাস ভেটেরিনারি (সাধারণ) ক্যাটাগরিতে বিশ্বব্যাপী ২০০টি জার্নালের মধ্যে জাভারের অবস্থান ৫৮তম।
প্রধান সম্পাদক ড. নাজমুল বলেন, বিজ্ঞানকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিত চিন্তা, মানসম্পন্ন পর্যালোচনা, নৈতিক গবেষণা এবং সমাজের প্রেক্ষাপটে প্রাসঙ্গিকতা প্রয়োজন।
জাভারের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে তিনি জানান, এটিকে আরও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মে উন্নীত করতে চান তারা। তাদের পরবর্তী লক্ষ্য এসসিআই/এসসিআইই ইনডেক্সিং এবং বৈশ্বিক গবেষকদের আরও বেশি সম্পৃক্ত করা।
তিনি আরও বলেন, এই স্বীকৃতি শুধু তাদের নয়, পুরো বাংলাদেশের গবেষণা অঙ্গনের গর্ব। দেশীয় জার্নাল থেকে গবেষণার যাত্রা শুরু করে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছানো সম্ভব, এটি তারই প্রমাণ।
জাভারের এই অর্জন বাংলাদেশের বৈজ্ঞানিক গবেষণার সক্ষমতা, স্বপ্ন এবং ভবিষ্যতের পথচলার দিকনির্দেশনা। এটি তরুণ গবেষকদের জন্য অনুপ্রেরণা। এই ধারা অব্যাহত থাকলে বিজ্ঞানভিত্তিক সমাজ নির্মাণে জাভার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অধ্যাপক নাজমুল হুসাইন নাজির।
সালাউদ্দিন/সাএ
সর্বশেষ খবর
ক্যাম্পাস এর সর্বশেষ খবর