• ঢাকা
  • ঢাকা, শনিবার, ০২ আগস্ট, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ১ মিনিট পূর্বে
শাহীন মাহমুদ রাসেল
কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ০২ আগস্ট, ২০২৫, ১০:২০ দুপুর

মিয়ানমার থেকে অবাধে ঢুকছে ভারী অস্ত্র, সীমান্তজুড়ে উদ্বেগ

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে আবারও অস্ত্র চোরাচালান বৃদ্ধি পেয়েছে। সম্প্রতি একের পর এক অভিযানে উদ্ধার হচ্ছে ভারী আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড, বিস্ফোরকসহ বিপুল সামরিক সরঞ্জাম। এসব ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা, প্রশাসন এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

বিশ্বাসযোগ্য সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, প্রতিদিন বাংলাদেশ থেকে চাল, ডাল, তেল, লবণ, নির্মাণসামগ্রী, এমনকি জ্বালানি কাঠও বৈধ-অবৈধ পথে মিয়ানমারে যাচ্ছে। এসব মালামাল ট্রলার, নৌকা, ভ্যান কিংবা পাহাড়ি গরুবাহী কাফেলার মাধ্যমে পাচার হচ্ছে। আর এই নিত্যপণ্যের বিনিময়ে মিয়ানমার থেকে আসছে ভয়ংকর মাদকদ্রব্য যেমন ইয়াবা, আইস (ক্রিস্টাল মেথ) এবং বিপজ্জনক ভারী অস্ত্র-গোলাবারুদ।

পাচারের সময় প্রায়ই বিজিবি বা কোস্ট গার্ড কিছু চালান জব্দ করছে। তবে সেগুলো কেবল পণ্যের বহনকারীর পর্যায়ে সীমাবদ্ধ থাকে, যেখানে ধরা পড়ে কিছু গরু, কয়েক বস্তা চাল বা কাঠ। প্রকৃত চোরাকারবারি, মূল দালাল কিংবা গন্তব্যস্থল কখনোই চিহ্নিত হয় না। ফলে যতটুকু সফলতা দাবি করা হয়, তা আংশিক বা লোক দেখানো বলেই মনে করছেন স্থানীয়রা।

গত ২৮ জুলাই রাত ১১টার দিকে হ্নীলা ইউনিয়নের নয়াপাড়া রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৬ এর পশ্চিম পাশে ‘হাজীর প্রজেক্ট’ পাহাড়ের পাদদেশে অভিযান চালায় র‍্যাব-১৫। অভিযানে কুখ্যাত রোহিঙ্গা ডাকাত শফি গ্রেপ্তার হয়। উদ্ধার হয় একটি ওয়ান শুটারগান, দুটি একনলা বন্দুক, একটি এলজি, ১০টি অ্যান্টি-পারসোনাল মাইন, ১০টি ডেটোনেটর, ৫০ রাউন্ড তাজা রাইফেলের গুলি, ৫৩টি রাইফেলের খালি খোসা, ৬টি শর্টগানের খালি কার্তুজ, ৩টি গ্রেনেড এবং ৭৬৯ গ্রাম ক্রিস্টাল মেথ (আইস)।

এরপর, ১ আগস্ট পৃথক অভিযানে কোস্ট গার্ড বিপুল পরিমাণ অস্ত্র ও ইয়াবা উদ্ধার করে। তবে অভিযানে কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি।

র‍্যাব, বিজিবি ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত কয়েক মাসে টেকনাফ, উখিয়া ও নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ১৫টি একে-৪৭ রাইফেল, শতাধিক বিদেশি পিস্তল এবং হাজারের বেশি গুলি উদ্ধার হয়েছে।

তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, অস্ত্র উদ্ধারের পরও চোরাকারবারি চক্র বা বাহক শনাক্তে তেমন কোনো দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। অধিকাংশ সময়ই 'পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার' দেখিয়ে ফাইল বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি হয়ে অস্ত্র ঢুকে টেকনাফের দমদমিয়া, লেদা ও চাকমারকুল ক্যাম্প হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে। অনেক সময় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ, কাঠ বহন বা মালবাহী ট্রলারের আড়ালে অস্ত্র আনা হয়।

টেকনাফের স্থানীয় সাংবাদিক আব্দুর রহমান বলেন, চোরাকারবারিরা এখন খুব গোছানোভাবে কাজ করছে। ক্যাম্পের একাংশে এই অস্ত্র দিয়ে আধিপত্য রক্ষা করা হচ্ছে। অনেকে আবার এগুলো দেশের ভেতরেও পাচার করছে।

স্থানীয় একজন ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দিনের আলোয় বৈধ পণ্যের আড়ালে যে ভয়ংকর বাণিজ্য চলছে, তা সবাই জানে। প্রশাসনের এক শ্রেণির লোকও এতে যুক্ত, না হলে এতটা নির্বিঘ্নে এত বড় পাচার সম্ভব হতো না।

সূত্রগুলো জানিয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে আগে থেকেই খুন, অপহরণ, মাদক ও চাঁদাবাজির মতো অপরাধ প্রবণতা ছিল। এখন সেখানে যোগ হয়েছে ভারী অস্ত্রের প্রবাহ। বিশেষ করে আরসা (ARSA) ও আরএসও (RSO)-এর মতো গোষ্ঠীগুলো ক্যাম্পে আধিপত্য বজায় রাখতে ভারী অস্ত্র সংগ্রহ করছে বলে দাবি স্থানীয়দের।

নাইক্ষ্যংছড়ির এক জনপ্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, মিয়ানমারের দিক থেকে প্রতিনিয়ত অস্ত্র আসছে। চোরাকারবারিরা সীমান্ত পাহাড়ি পথে ঢুকিয়ে ক্যাম্পে পৌঁছে দিচ্ছে। স্থানীয় কয়েকজন গডফাদারও জড়িত।

একাধিক সীমান্ত নিরাপত্তা বিশ্লেষক বলেন, যেখানে নিত্যপণ্যের চালানের আড়ালে প্রতিদিনই অস্ত্র ঢুকে পড়ে, সেখানে কেবল জব্দ করেই থেমে থাকা মানে মূল সমস্যাকে অস্বীকার করা। এটি আসলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার জন্য স্থায়ী হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিত্যপণ্য পাচারের অনুমতিপত্র, সীমান্ত গেট ও রুটগুলোতে কড়া নজরদারি এবং রুটভিত্তিক গোয়েন্দা তদন্ত ছাড়া এই ভয়াবহ 'বার্টার' বাণিজ্য থামানো যাবে না। তা না হলে, মানবিকতার মুখোশে চলতে থাকা অস্ত্র ও মাদকের ভয়ংকর রূপরেখা আরও বিস্তৃত হবে, যার খেসারত দিতে হতে পারে পুরো জাতিকে।

নিয়মিত অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী প্রায়ই বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র, গ্রেনেড, বিস্ফোরক ও গুলি উদ্ধার করছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। সংবাদ বিজ্ঞপ্তি ও প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব সাফল্যের খবর নিয়মিত প্রকাশ পাচ্ছে। কিন্তু সচেতন মহলসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশ্ন, এই অস্ত্রগুলোর উৎস কোথায়? কারা এগুলো বাংলাদেশে ঢোকাচ্ছে? এবং কাদের নির্দেশনা বা মদদে এত বড় চোরাচালান সম্ভব হচ্ছে?

বিশ্লেষকরা বলছেন, উদ্ধার হওয়া অস্ত্র যতটা না উদ্বেগের, তার চেয়েও বড় আশঙ্কার বিষয় হলো, এগুলোর নেপথ্যে থাকা শক্তিশালী ও সংগঠিত সিন্ডিকেট আজও ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। প্রশাসনের তদন্ত প্রায়ই 'পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার' বা 'চোরাকারবারি পালিয়ে গেছে'- এই পর্যায়ে থেমে যায়। ফলে মূল হোতারা ধরা না পড়ায় অস্ত্রের প্রবাহ বন্ধ হচ্ছে না, বরং দিনে দিনে বাড়ছে।

উখিয়া-টেকনাফ সীমান্তে কর্মরত একজন সাবেক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি অস্ত্রের পেছনে একটি লাইন থাকে—কে পাঠিয়েছে, কে এনেছে, কে গ্রহণ করেছে। কিন্তু আমরা কেবল মাঝপথের অংশটি ধরতে পারছি, সূত্রপাত বা শেষ গন্তব্য আজও অজানাই থেকে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিকে অনেকেই দেখছেন প্রশাসনিক দুর্বলতা, রাজনৈতিক প্রভাব এবং কৌশলগত অবহেলার ফল হিসেবে। কারণ, উদ্ধারই যদি শেষ লক্ষ্য হয়, তবে অস্ত্র আসাও চলতেই থাকবে। কিন্তু চক্রের মূল ইন্ধনদাতাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় না আনলে অস্ত্রের এই স্রোত কখনোই থামবে না—বরং আরও গোপন, আরও সংঘবদ্ধ ও আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠবে।

সংশ্লিষ্ট এক সিনিয়র কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কিছু নির্দিষ্ট সীমান্ত পয়েন্ট দিয়ে প্রশিক্ষিত বাহিনী অস্ত্র ঢোকাচ্ছে। এদের সঙ্গে স্থানীয় কিছু গডফাদারের যোগাযোগ রয়েছে বলেও আমাদের তথ্য রয়েছে।

গোয়েন্দা তথ্য বলছে, এসব অস্ত্র পাচারের মুনাফার একটি অংশ মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র সংগঠন যেমন আরাকান আর্মি-র কাছে সরবরাহ করা হচ্ছে। আবার কিছু অস্ত্র স্থানীয় রোহিঙ্গা গ্রুপের হাতে থেকে মাদক বা মানবপাচার সিন্ডিকেটেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

তথ্যমতে, যেখানে একটিমাত্র হ্যান্ডগান দিয়েই একটি ক্যাম্প নিয়ন্ত্রণ করা যায়, সেখানে একে-৪৭ আসা মানে বড় ধরনের সংঘর্ষ বা সশস্ত্র প্রস্তুতির ইঙ্গিত। এটা জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও হুমকি।

উখিয়ার পালংখালী এলাকার ব্যবসায়ী সোলায়মান বলেন, রাতে পাহাড়ি পথে আনাগোনা দেখলেই আমরা ভয় পাই। আগে মাদক নিয়ে চিন্তা ছিল, এখন আবার গ্রেনেড আর মাইন। মানুষ আর নিরাপদ নয়।

কক্সবাজারের সিনিয়র আইনজীবী এডভোকেট আব্দুল মান্নান বলেন, এই অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা শুধু ক্যাম্প নয়, পুরো অঞ্চলের নিরাপত্তা ঝুঁকির দিকে ইঙ্গিত করে। এটা প্রশাসনের জন্য অ্যালার্মিং।

তার মতে, সীমান্তে উন্নত প্রযুক্তি ও ড্রোন নজরদারি চালু করা, অস্ত্র-সম্পর্কিত গোয়েন্দা শাখা শক্তিশালী করা, স্থানীয় দালাল ও গডফাদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বিশেষ যৌথ বাহিনীর অভিযান, উদ্ধার হওয়া অস্ত্রের উৎস ও গন্তব্য নিশ্চিত করে তদন্ত, আন্তঃবাহিনী টাস্কফোর্স গঠন করে সমন্বিত অভিযান পরিচালনা করলে তা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।

বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে মাদক, মানবপাচার এখন পুরনো ইস্যু। নতুন করে যুক্ত হয়েছে অস্ত্র চোরাচালান, তাও একে-৪৭, গ্রেনেড, ডেটোনেটর, আইইডি-র মতো সামরিক মানের সরঞ্জাম। এসব চলতে থাকলে শুধু সীমান্ত নয়, জাতীয় নিরাপত্তাও ভয়াবহ হুমকির মুখে পড়বে। এখনই জরুরি সময়, রাষ্ট্রীয়ভাবে কঠোর, সমন্বিত, ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহণের। এমনই অভিমত সচেতন মহলের।

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]