
বান্দরবানের লামা উপজেলায় চাম্বি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গায় ১৪টি দোকান জবরদখলের অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর চৌধুরী প্রকাশ (কালা জাহাঙ্গীর) সহ কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের প্রায় ৩০ শতক জমি দখলদারদের হাতে। তারা গত ৩৩ বছর ধরে দোকান তৈরি করে তাতে ব্যবসা করছেন। একমাত্র মো. কামাল হোসেন বিদ্যালয়কে নিয়মিত ভাড়া দিলেও, বাকি ১৩টি দোকানের দখলদারদের তিন-চারজন বিগত সময়ে সামান্য ভাড়া দিলেও গত ৮-৯ বছর ধরে সেটিও দিচ্ছেন না।
১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি শিক্ষা, সংস্কৃতি, খেলাধুলা সর্বক্ষেত্রে এগিয়ে থাকলেও বর্তমানে এর জমি জবরদখলের কারণে সর্বমহলে নিন্দার ঝড় উঠেছে। জানা যায়, ৩০৭ নং চাম্বি মৌজার ১৮ নং খতিয়ানের দাগ নং ১৯২, ১৯৩ দাগাদির ৯৮ শতক জমির ওপর বিদ্যালয়টি তৈরি হয়েছিল। বর্তমানে প্রায় ৮০০ ছাত্রছাত্রী ও ৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা নিয়ে বিদ্যালয়টি পরিচালিত হচ্ছে। বহুতল ভবন ও শিক্ষকদের পরিবর্তন হলেও, বিদ্যালয়ের জমির ওপর নির্মিত পাকা, সেমিপাকা জবরদখলকৃত দোকানঘরগুলো এখনো সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিনের ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীর সহ অনেকের দখলে রয়েছে। সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন যখন স্কুলের এসএমসি কমিটির সভাপতি ছিলেন, তখন তিনি নিজের ইচ্ছামতো নামমাত্র ভাড়ায় তার ভগ্নিপতি জাহাঙ্গীরকে ৪টি দোকান ভাড়া দেখান। যদিও প্রধান শিক্ষক তাতে স্বাক্ষর করেননি এবং জাহাঙ্গীর কখনো স্কুলকে ভাড়া দেননি।
বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৩টি দোকান প্লটের মধ্যে এইচ এম আবু জাহাঙ্গীর ৪টি, জাহানারা বেগম ১টি, যুব উন্নয়ন সমিতি ২টি, মো. জাকারিয়া ১টি, আব্দুল লতিফ ২টি, মো. নাজিম উদ্দিন ১টি, রফিক আহমদ ১টি এবং বিএনপি কার্যালয় নামে ১টি দোকান জবরদখল করে রেখেছেন। এসব দোকান তারা উপ-ভাড়া দিয়ে প্রতি মাসে নিয়মিত টাকা নিচ্ছেন। জবরদখলকারীরা একসময় স্কুলের জায়গা হিসেবে ভাড়া চুক্তিপত্র করলেও পরে অস্বীকার করে প্রভাব খাটিয়ে ভাড়া দেন না।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, স্কুলের জায়গায় অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ এবং দখলদারদের উচ্ছেদে সাবেক প্রধান শিক্ষকরা, বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং তিনি (বর্তমান প্রধান শিক্ষক) বিদ্যালয়ের এই জায়গা উদ্ধারে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ৪২টি চিঠিপত্র প্রেরণ করেছেন, কিন্তু কোনো সুরাহা পাননি। বরং দখলদাররা নামে-বেনামে অস্তিত্ববিহীন অভিযোগ এনে শিক্ষকদের হয়রানি করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, অজ্ঞাত কারণে তাদের আবেদনগুলো তদন্ত হয় না, কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে করা ভুয়া অভিযোগগুলো বারবার তদন্ত হয়। প্রধান শিক্ষক সাবিনা ইয়াসমিন স্কুলের বেদখল হওয়া দোকান প্লট ও জায়গা উদ্ধারে প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছেন।
অবৈধ দখলদার আব্দুল লতিফ, শাহ আলম (জাহাঙ্গীরের ভাড়াটিয়া), মোতালেব হোসেন (যুব উন্নয়ন সমিতির ভাড়াটিয়া) জানান, এগুলো স্কুলের জায়গা তারা জানেন। তারা দোকান ঘর নির্মাণ বা অন্যের কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে ব্যবসা করছেন।
লামা উপজেলা শিক্ষা অফিসার দেবাশিষ বিশ্বাস বলেন, এই বিষয়টি নিয়ে তার চেয়ে বড় বড় লোক মাথা ঘামাচ্ছে। জেলা পরিষদের মাসিক মিটিংয়েও এই বিষয়টি উঠেছে, কিন্তু এখনো সুরাহা হয়নি। এদিকে লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে প্রধান শিক্ষকের লিখিত আবেদনের জেরে লামা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বিষয়টি তদন্ত করেন। তিনি জানান, সরেজমিনে বিদ্যালয়ের জবরদখলের তদন্তকাজ শেষ করেছেন এবং তাতে জবরদখলের সত্যতা মিলেছে। তিনি তদন্ত রিপোর্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে জমা দিয়েছেন।
লামা উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মঈন উদ্দিন জানান, তদন্ত রিপোর্টে স্কুলের জায়গা জবরদখলের সত্যতা পাওয়া গেছে। জেলা প্রশাসকের অনুমতিক্রমে বিধি মোতাবেক জমি উদ্ধারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সর্বশেষ খবর
জেলার খবর এর সর্বশেষ খবর