ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় দুই বছরের যুদ্ধ ও নৃশংসতার পরও তার কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারে নি।
পার্সটুডের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা অঞ্চলের হামাস প্রধান ড. খালিল আল-হাইয়া আল-জাজিরা টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দখলদার ইসরায়েল দুই বছরের যুদ্ধে সম্পূর্ণভাবে পরাজিত হয়েছে এবং তার কোনো কৌশলগত লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি।
তিনি জানান, হামাস দখলদারদেরকে পুনরায় যুদ্ধ শুরু করার কোনো অজুহাত দেবে না এবং সংঘর্ষ ফের শুরু না হয় সে জন্য যথেষ্ট দৃঢ়সংকল্প রয়েছে। আল-হাইয়ার ভাষায়, গাজায় দেহাবশেষ খুঁজে পাওয়া কঠিন, কারণ ইসরায়েলের বোমা হামলায় গাজার ভূমি ব্যাপকভাবে পরিবর্তিত হয়েছে এবং যারা দাফনের কাজ করেছিলেন, তাদের অনেকে শহীদ হয়েছেন। এখন পর্যন্ত ২৮ জনের মধ্যে ১৭ জনের দেহাবশেষ হস্তান্তর করা হয়েছে, বাকিদের মরদেহ খোঁজা হচ্ছে।
গাজার মানবিক পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, “গাজা উপত্যকায় এখন দৈনিক প্রায় ছয় হাজার ট্রাক সাহায্যের প্রয়োজন, মাত্র ছয়শ' ট্রাক যথেষ্ট নয়। দখলদাররা এখনো বহু জরুরি পণ্যের প্রবেশে বাধা দিচ্ছে, যেন যুদ্ধ এখনো চলছে। এই আচরণ যুদ্ধবিরতি চুক্তিকে হুমকির মুখে ফেলছে এবং মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়াচ্ছে।”
আল-হাইয়া জোর দিয়ে বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গাজা পুনর্গঠনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। তার মতে- হামাস ও সব ফিলিস্তিনি সংগঠন একমত হয়েছে যে, জাতিসংঘের সংস্থাগুলো গাজার পুনর্গঠন ও সাহায্য বিতরণ তদারকির দায়িত্ব পালন করবে। তিনি আরও বলেন, “আমরা যুদ্ধবিরতি অব্যাহত রাখা, অবিলম্বে পুনর্গঠন শুরু করা এবং জাতীয় ঐক্যের লক্ষ্যে ফিলিস্তিনিদের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানাচ্ছি।”
ড. আল-হাইয়া আরও জানান, গাজা উপত্যকার প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনের জন্য একটি “প্রশাসনিক কমিটি” গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, “আমরা মিসরের কাছে ৪০ জনেরও বেশি স্বতন্ত্র জাতীয় ব্যক্তিত্বের একটি তালিকা জমা দিয়েছি, যাদের মধ্য থেকে এই কমিটির সদস্য বাছাই করা হবে। কমিটি গাজার প্রশাসনের পূর্ণ দায়িত্ব পালন করবে, আর হামাস সব নির্বাহী কাজ হস্তান্তরে প্রস্তুত।”
তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, গাজার প্রশাসনিক বিষয়ে বাইরের কোনো হস্তক্ষেপ গ্রহণযোগ্য নয়। সীমান্ত নিরাপত্তা ও যুদ্ধবিরতির তদারকি প্রসঙ্গে আল-হাইয়া জানান, হামাস আন্তর্জাতিক বাহিনীর উপস্থিতি মেনে নিতে প্রস্তুত, যারা দুই পক্ষকে পৃথক করবে এবং সীমান্ত পর্যবেক্ষণ করবে— তবে শর্ত হচ্ছে, তারা যেন গাজার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে কোনোভাবেই হস্তক্ষেপ করতে পারবে না। জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আরব ও মুসলিম বাহিনীকেও স্বাগত জানানো হবে।
আল-হাইয়া বলেন, “গাজা ও পশ্চিম তীর একই জাতীয় কাঠামোর অংশ, তাদের আলাদা করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রশাসনিক কমিটির মেয়াদ শেষ হবে ফিলিস্তিনি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর বা একটি সর্বজনীন সরকার গঠনের মাধ্যমে।”
তিনি “দোহা ঘটনা”কে যুদ্ধের সমাপ্তির একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় বলে বর্ণনা করে বলেন, “এই ঘটনা এবং ইসরায়েলের ভয়াবহ ব্যর্থতা ছিল দখলদারদের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা, যা দেশটির অভ্যন্তরে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। আমরা এমন এক জাতি যারা দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার অধিকার রাখে এবং এটা আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। যতদিন দখলদারি থাকবে ততদিন আমাদের অস্ত্র প্রতিরক্ষার বৈধ উপকরণ হিসেবে থাকবে; আর যদি দখল শেষ হয় এবং ফিলিস্তিনি রাষ্ট্র গঠিত হয়, তখন এই অস্ত্র রাষ্ট্রের অধীনে যাবে।”
ফিলিস্তিনি বন্দি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “বন্দি ইস্যু একটি জাতীয় বিষয় এবং আমরা সব বন্দিদের মুক্তির জন্য প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু দখলদার ইসরাইল মারওয়ান বারগুতি, আহমাদ সা’দাত, আব্বাস সাইয়েদ ও হাসান সালামাহসহ বহু প্রতিরোধ নেতার মুক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।”
সূত্র- পার্সটুডে।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর