আজকের বিশ্বে তথ্যই সবচেয়ে বড় শক্তি। কূটনীতি, সামরিক কৌশল এবং বৈশ্বিক রাজনীতির প্রতিটি পদক্ষেপে গুপ্তচরবৃত্তি ও গোয়েন্দা কার্যক্রমের প্রভাব অপরিসীম। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা রক্ষা, সন্ত্রাসবাদ দমন, সাইবার যুদ্ধ মোকাবিলা এবং ভবিষ্যৎ সংঘাতের পূর্বাভাসে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিশ্বের শীর্ষ কিছু গোয়েন্দা সংস্থা কেবল তাদের নিজ দেশের মধ্যেই প্রভাব বিস্তার করে না, বরং আন্তর্জাতিক রাজনীতির ভারসাম্যও অনেকাংশে নির্ভর করে তাদের কর্মকাণ্ডের উপর।
১. সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (CIA) – যুক্তরাষ্ট্র
১৯৪৭ সালে প্রতিষ্ঠিত CIA বিশ্বজুড়ে তথ্য সংগ্রহ, গুপ্ত অভিযান এবং বিদেশি কূটনৈতিক প্রভাব বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান হাতিয়ার। HUMINT, সংকেত বিশ্লেষণ ও স্যাটেলাইট নজরদারিতে পারদর্শী এই সংস্থা সরাসরি প্রেসিডেন্ট ও শীর্ষ নীতিনির্ধারকদের তথ্য সরবরাহ করে।
২. সিক্রেট ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (MI6) – যুক্তরাজ্য
১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত MI6 দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় মিত্রশক্তিকে গুরুত্বপূর্ণ সহায়তা প্রদান করে ইতিহাসে অমর হয়। আজও এটি ব্রিটিশ পররাষ্ট্র নীতি ও বৈশ্বিক নিরাপত্তার মূল ভরসা।
৩. মোসাদ – ইসরায়েল
“এটা সম্পন্ন হয়েছে” অর্থের মোসাদের কর্মকাণ্ড নিখুঁত ও গোপন। নাৎসি যুদ্ধাপরাধী অ্যাডলফ আইখম্যানকে খুঁজে বের করা এবং উচ্চস্তরের গোপন অভিযান পরিচালনা মোসাদের ক্ষমতার প্রমাণ।
৪. রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (RAW) – ভারত
১৯৬৮ সালে প্রতিষ্ঠিত RAW দক্ষিণ এশিয়ার শক্তিশালী গোয়েন্দা সংস্থা। আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ব্যবস্থায় গুপ্তচরবৃত্তি, প্রতিরক্ষা তথ্য সংগ্রহ এবং সীমান্তবর্তী হুমকি মোকাবিলায় সংস্থার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।
৫. ফেডারেল সিকিউরিটি সার্ভিস (FSB) – রাশিয়া
সোভিয়েত কেজিবি’র উত্তরসূরী FSB রাশিয়ার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সন্ত্রাসবাদ দমন এবং সাইবার প্রতিরক্ষা কার্যক্রমে নিয়োজিত। রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের প্রভাব সংস্থাটিকে রাজনৈতিক ও সামরিক সিদ্ধান্তের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছে।
৬. মিনিস্ট্রি অফ স্টেট সিকিউরিটি (MSS) – চীন
চীনা কমিউনিস্ট পার্টির অধীনে MSS জাতীয় নিরাপত্তা, প্রযুক্তি এবং আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সংস্থাটি চীনের সামরিক উন্নয়ন ও বৈদেশিক নীতিতে অপরিহার্য।
৭. BND – জার্মানি
জার্মানির প্রধান বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থা BND বার্লিন থেকে পরিচালিত হয়। এটি দেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য প্রাথমিক তথ্য উৎস এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
৮. ডিরেক্টোরেট জেনারেল ফর একস্টের্নাল সিকিউরিটি (DGSE) – ফ্রান্স
ফরাসি গোয়েন্দা সংস্থা DGSE বিদেশি গোয়েন্দা সংগ্রহ, সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধ এবং কূটনৈতিক সহায়তায় জ্ঞান ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এটি ফ্রান্সের বৈশ্বিক নিরাপত্তা নীতি বাস্তবায়নের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার।
৯. ইন্টার-সার্ভিসেস ইন্টেলিজেন্স (ISI) – পাকিস্তান
ISI পাকিস্তানের প্রধান গোয়েন্দা সংস্থা যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা, সীমান্ত নজরদারি এবং সন্ত্রাসবাদ দমন কার্যক্রমে নিয়োজিত। সংস্থার রাজনৈতিক ও সামরিক প্রভাব দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক মানচিত্রেও দৃশ্যমান।
১০. ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস (NIS) – দক্ষিণ কোরিয়া
দক্ষিণ কোরিয়ার NIS দেশটির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা, সাইবার প্রতিরক্ষা এবং উত্তর কোরিয়ার হুমকি মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সরকার ও সামরিক বাহিনীর নীতি নির্ধারণে তথ্য সরবরাহের মূল উৎস।
সাজু/নিএ
সর্বশেষ খবর
সারাবিশ্ব এর সর্বশেষ খবর