• ঢাকা
  • ঢাকা, সোমবার, ১৭ নভেম্বর, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২৪ সেকেন্ড পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ১৭ নভেম্বর, ২০২৫, ১২:২৬ রাত

১০০ বছরেও বাংলাদেশের যে গ্রামে ঢোকেনি পুলিশ

ছবি: সংগৃহীত

রূপকথার মতো এক গ্রাম নাটোরের সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া। এ গ্রামের শতভাগ মানুষ শিক্ষিত। শুধু শিক্ষিত নয়, এখানে এসএসসি পাস করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। দেশ-বিদেশে এ গ্রামের শত শত উচ্চশিক্ষিত ও পেশাজীবী মানুষ সাফল্যের স্বাক্ষর রাখছেন।

এ গ্রামে নেই বাল্যবিবাহ, যৌতুক বা অসামাজিক কার্যক্রম। শতভাগ স্যানিটেশন ব্যবস্থা আছে গ্রামটিতে। এখানে নেই কোনো কোন্দল, হিংসা ও বিদ্বেষ।গ্রামের সার্বিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখে সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন।

গ্রামবাসীরা মনে করেন, শিক্ষার প্রতি অনুরাগ ও শতভাগ শিক্ষিত হওয়ার কারণে মানুষের চিন্তা-ভাবনা ও মননে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটেছে। এ কারণে গ্রামের মানুষজন কলহ ও সংঘাত থেকে দূরে থাকেন। এ ছাড়া গ্রামটি পরিচালনার জন্য তাদের নিজস্ব সংবিধান রয়েছে। যা সবাই মেনে চলেন। গ্রামে কোনো সমস্যা-সংকট দেখা দিলে গ্রামবাসী মিলে সংবিধানের আলোকে তা সমাধান করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যেখানে গ্রামবাসীর মধ্যে নিত্য কলহ ও সংঘাত লেগেই থাকে, যা সংবাদের শিরোনামও হয়। সেখানে নাটোর জেলার সিংড়া থানার প্রত্যন্ত গ্রাম হুলহুলিয়া সারা দেশে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এই গ্রামের মানুষরা সবাই একত্রে হৃদ্যতার সঙ্গে বসবাস করে। গ্রামবাসীর নামে নেই কোনো মামলা-মোকদ্দমাও।

গ্রামবাসীদের দাবি, গত ১০০ বছরে কোনো মামলা-মোকদ্দমার জন্য পুলিশকে তাদের গ্রামে যেতে হয়নি। শুধু তাই না, গ্রামের মানুষজন শতভাগ শিক্ষিত।

নাটোর সিংড়া উপজেলার হুলহুলিয়া গ্রামটির পাশেই চলনবিল। নাটোরের হুলহুলিয়া গ্রামে গেলে প্রথমেই চোখে পড়ে গ্রামের প্রবেশমুখে বিশাল একটি গেট। যেখানে লেখা রয়েছে আদর্শ গ্রাম হুলহুলিয়া।

স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার, মসজিদ ও গোরস্থানভিত্তিক তাদের আলাদা আলাদা পরিচালনা কমিটিও রয়েছে। এ কমিটিও ভোটের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হন। গ্রামবাসী গ্রামের মধ্যে কোনো বিভাজন তৈরি করেন না।

দরিদ্রদের সহায়তায় সবাই একসঙ্গে এগিয়ে আসেন। গ্রামের জনসংখ্যা ৬ হাজার হলেও প্রায় ৪ হাজার মানুষ গ্রামের বাইরে চাকরি করেন। তারাও অর্থনৈতিকভাবে গ্রামবাসীকে বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। ছেলেমেয়েদের জন্য এসএসসি পাশ করা বাধ্যতামূলক।

বাংলাদেশের অন্যান্য গ্রাম থেকে হুলহুলিয়া গ্রামটিকে যে কারণে পৃথক করেছে তার অন্যতম প্রধান কারণ এই হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ নামের সামাজিক প্রতিষ্ঠানটি। এই পরিষদের মাধ্যমেই গ্রামের সব ধরনের সামাজিক অনুষ্ঠান এবং গ্রামবাসীর মধ্যে কখনো কলহ দেখা দিলে তা মীমাংসা করা হয়।

সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ পরিচালনার একটি কমিটিও রয়েছে। কমিটিতে একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যানসহ সদস্য রয়েছেন আরও ২১ জন। তারা সবাই গ্রামের পুরুষ ভোটারদের দ্বারা দুই বছরের জন্য নির্বাচিত হন।

দুইবছর পর পর ভোটের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী, যারা জাতীয় নির্বাচনে ভোট দেওয়ার যোগ্য বলে বিবেচিত হন তারাই সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

এ ছাড়া পাঁচ সদস্যের উপদেষ্টা কমিটিও রয়েছে তাদের। গ্রামের বিচার বিভাগীয় ৮টি পাড়াতেও আলাদা আলাদা কমিটি রয়েছে। যাকে বলা হয় নিম্ন আদালত। এই কমিটি পাড়ার আকার-আকৃতি অনুসারে ৫ থেকে ৮ সদস্যের হয়ে থাকে।

জানা গেছে, ১৯১৪-১৫ সালের দিকে একবার প্রবল বন্যায় ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় গ্রামে অভাব দেখা দেয়। গ্রামের অনেক চাষি ধান-বীজের অভাবে জমি ফেলে রাখতে বাধ্য হন। সবার মনে কষ্ট, হতাশা। বিষয়টি গ্রামের মাতবর মছির উদ্দিন মৃধার মনে দাগ কাটে। একদিন গ্রামের প্রতিটি পরিবার থেকে একজন করে লোক ডেকে সভায় বসেন তিনি। সিদ্ধান্ত হয়, যাদের ঘরে অতিরিক্ত ধান-বীজ আছে, তারা বিনাশর্তে অন্যদের ধার দেবেন।

সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়, খালি জমি ফসলে ভরে ওঠে। এতে উদ্বুদ্ধ হয়ে গ্রামের উন্নয়নে ১৯৪০ সালে ‘হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ’ নামে একটি পরিষদ গঠিত হয়।

হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আল তৌফিক পরশ জানান, গ্রামের কোনো সদস্যের কোনো সমস্যা দেখা দিলে প্রথমে ওই পরিবারের সদস্যরা বিষয়টি মিমাংসা করার চেষ্টা করেন। তারা না পারলে বাকিরা চেষ্টা করেন। তারা না পারলে তখন পাড়ার যে কমিটি আছে, সেই কমিটি বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তারাও ব্যর্থ হলে তখন সামাজিক উন্নয়ন পরিষদে বিষয়টি তোলা হয়। সেখানে যে রায় দেওয়া হয় সেটি সবাই মেনে নেয়। এ কারণেই কাউকে কোর্টে যেতে হয় না। পুলিশ ডাকারও প্রয়োজন হয় না। এটি আমাদের গত ১০০ বছরের ইতিহাস।

১৯৪০ সালে মছির উদ্দিন সামাজিক উন্নয়ন পরিষদ গঠন করেন ও গ্রাম পরিচালনার সংবিধান তৈরি করে লিখিত রূপ দেন।

এই গ্রামে ১৯৪২ সালে ‘দ্য হুলহুলিয়া ডায়মন্ড ক্লাব’ গঠন করা হয়। মরহুম মফিজ উদ্দিন প্রামানিক ক্লাবটি গঠন করেন। ক্লাবের উদ্যোগে খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ১৩ সদস্যের একটি কমিটি এই ক্লাব পরিচালনা করে। হুলহুলিয়ায় সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করে আসছে শেকড় ও বটবৃক্ষ নামের দুটি অরাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন। এই প্রতিষ্ঠানের সদস্য সবাই চাকরিজীবী। তাদের অনুদানে গ্রামের অভাবী ছাত্রছাত্রীদের বৃত্তি, অসহায় মানুষকে সহায়তা ও বেকারদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হয়।

গ্রামের মানুষজন শতভাগ শিক্ষিত। সব ছেলেমেয়ের জন্যই এসএসসি পাস করা বাধ্যতামূলক। কোনো পরিবারের ছেলেমেয়ে দারিদ্র্যতার কারণে তার সন্তানকে পড়ালেখা করাতে না পারলে তখন দরিদ্র তহবিল কমিটি থেকে সেই ছেলেমেয়ের শিক্ষার দায়িত্ব নেওয়া হয়। চাকরিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত তাকে সহায়তা করা হয়। চাকরি পাওয়ার পর তা পরিশোধ করতে হয়। গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল, একটি হাইস্কুল, একটি মাদ্রাসা ও একটি মসজিদ রয়েছে। গ্রামটি থেকে দুইশর অধিক বিএসসি প্রকৌশলী, শতাধিক এমবিবিএস ডাক্তার, ১৭ জন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ১১ জন বিচারকসহ নানা পেশার মানুষ ও প্রখ্যাত ব্যক্তিত্ব রয়েছেন।

হুলহুলিয়া গ্রামের বাসিন্দারা জানান, আমাদের গ্রামে মসজিদ একটিই, গোরস্তানও একটি। দুটি মসজিদ কখনোই করতে দেওয়া হবে না। কারণ দুটি মসজিদ হলে গ্রাম ভাগ হয়ে যাবে। আমরা কখনোই গ্রামের বিভক্তি চাই না।

বাংলাদেশের পরমাণু শক্তি কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও বাংলাদেশের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামার মরহুম মোহাম্মদ হানিফ উদ্দিন মিয়া এই গ্রামের বাসিন্দা। এ ছাড়া গুণী ব্যক্তিদের মধ্যে আইন বিভাগের সাবেক সচিব মরহুম একে কাদের তালুকদার, বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মির্জা মনজুরুল কাদের জুয়েল, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মরহুম এমএম রহমতুল্লাহ ও নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন ইঞ্জি. জমসেদ আলী রয়েছেন।

এ ছাড়া, শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেন্টাল ইউনিটের চেয়ারম্যান ডা. মাহবুবুর রহমান, অস্ট্রেলিয়ার সিডনির সেন্ট্রাল হাসপাতালের ডিন ড. মন্টু তালুকদার ও কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের পরিচালক ড. জিল্লুর রহমান এই গ্রামের বাসিন্দা।

২ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০১৬ সালে হুলহুলিয়াতে ডিজিটাল হাব প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। এই ডিজিটাল হাব সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এতে ১১টি কম্পিউটার, একটি প্রজেক্টর, একটি লাইভ টেলিভিশন রয়েছে। এ ছাড়া একটি ডিজিটাল ইসিজি রুমও রয়েছে। হুলহুলিয়া গ্রামের একটি নিজস্ব ওয়েবসাইটও রয়েছে।

হুলহুলিয়া সামাজিক উন্নয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আল তৌফিক পরশ জানান, ডিজিটাল হাব থেকে সরাসরি গ্রামের মানুষদের নানা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এ ছাড়া যে কোনো ছাত্রছাত্রীদের কম্পিউটার বিষয়ক বিভিন্ন প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। আর ওয়েবসাইট থেকে আমাদের গ্রাম বিষয়ে তথ্য জানার সুযোগ আছে।

সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুজ্জামান জানান, হুলহুলিয়া গ্রামে অপরাধ কম, নেই বললেই চলে যদি কোন ঝামেলা হয় তাহলে তা তাদের নিজেদের মধ্যে সমাধান করে নেয়। হুলহুলিয়া গ্রামের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক।

সিংড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাজহারুল ইসলাম বলেন, আমি শুনেছি হুলহুলিয়া গ্রাম একটি আদর্শ গ্রাম হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। সে গ্রামে কোনো মামলা মোকদ্দমা নেই। নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করেন। গ্রামেই বিচার সালিশ হয়।

কুশল/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]