• ঢাকা
  • ঢাকা, শুক্রবার, ১৮ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ৩৯ সেকেন্ড পূর্বে
জিসান নজরুল
ইবি প্রতিনিধি
প্রকাশিত : ১৮ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০৭ রাত

ইবির পুকুর থেকে শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার, মৃত্যু ঘিরে রহস্য

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) পুকুর থেকে সাজিদ আব্দুল্লাহ নামে এক শিক্ষার্থীর মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ছয়টারয় শাহ আজিজুর রহমান হলের পুকুর থেকে মৃতদেহটি উদ্ধার করা হয়। জানা গেছে, সাজিদ আল-কুরআন অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি শহিদ জিয়াউর রহমান হলে থাকতেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইল উপজেলায়। তার বাবা মুহাম্মদ আহসান হাবিবুল্লাহ দেলোওয়ার একটি মাদরাসার সুপারিনডেন্ট।

ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে হল সংলগ্ন পুকুরে একটি মরদেহ ভেসে থাকতে দেখেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ও ইবি থানা পুলিশ সদস্যদের উপস্থিতিতে মরদেহ উদ্ধার করা হয়। পরে ইবি মেডিকেলে নেয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা হয়। পরে মৃতদেহটি কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হলে সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে হাসপাতালের মসজিদে সাজিদের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে ১০ কার্যদিবসের মধ্যে লিখিত আশ্বাসের দাবিতে লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স আটাকে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ লিখিত আশ্বাস দিলে দেড়টার দিকে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা। টাঙ্গাইলে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে।

এদিকে সাজিদের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছেন তার সহপাঠী, শিক্ষক ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা। তার মৃত্যুর প্রকৃত কারণ এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এছাড়া সাজিদের বন্ধুরা জানান, সাজিদ সাঁতারে খুব অভিজ্ঞ ছিল। তাহলে সে কিভাবে পুকুর ডুবে মারা যান? এতে এটি নিছক দুর্ঘটনা, নাকি অন্য কোনো রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এ নিয়ে আলোচনা ও উদ্বেগ বাড়ছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, তার মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যজনক এবং এর পেছনের কারণ উদ্ঘাটনে সুষ্ঠু তদন্ত প্রয়োজন।

সাজিদের বন্ধু ইনসানুল ইমাম নুর বলেন, আমি গতকাল বিকেল ৫.৫১ মিনিটে কল দিছিলাম। ফোন রিসিভ হয়েছিল তবে অপরপাশ থেকে কোনো কথা হয়নি। পরে সাজিদের রুমে যাই। দেখলাম, তার রুম ভেতর থেকে বন্ধ। পরে আমি চলে আসি। পরে তার মৃত্যুর খরব শুনি। পরে দায়িত্বরত আনচার ও এক ছোট ভাই রুম থেকে তার ফোনটি উদ্ধার করে। সর্বশেষ গত পরশু তার সাথে আমার দেখা হয়েছে। বলার অনেক কিছু আছে কিন্তু এখন বলব না। তবে পরে বলব। তার মৃত্যু আমি স্বাভাবিক বলে মনে করি না।

সাজিদের রুমমেট জানান, সোমবার দুপুর ২টায় আমি বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গিয়েছিলাম, তখন সাজিদের সাথে কথা হয়েছিল। আরেক রুমমেট বলেন, বুধবার আমি দুপুর ৩টার পর ঢাকার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হই, তখন সাজিদ রুমেই ছিল।

সাজিদের বাবা আহসান হাবিবুল্লাহ এসেছিলেন কুষ্টিয়ায় ছেলের জানাজায়। তিনি বলেন, আমার ছেলের মৃত্যু রহস্যজনক। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চাই।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. শাহিনুজ্জামান বলেন, কিভাবে মারা গেছে তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। বিশ্ববিদ্যালয় ও হল প্রশাসন ইতোমধ্যে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। সাজিদের পোস্টমর্টেম হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পাওয়ার পর আমরা প্রকৃত ঘটনা জানতে পারব।

সুরতহাল প্রতিবেদনের বিষয়ে প্রাথমিকভাবে জানতে চাইলে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক হোসেন ইমাম বলেন, প্রাথমিকভাবে তার শরীরে অপমৃত্যুর কোনো লক্ষণ দেখা যায়নি। তবে ভিসেরা রিপোর্ট আসার পর আমরা নিশ্চিত বলতে পারবো।

এদিকে ময়নাতদন্ত নিয়ে দায়িত্বরত কুষ্টিয়া মডেল থানার এস আই রেজাউল বলেন, লাশটি পানিতে দীর্ঘসময় ছিলো। একারণে পরিপূর্ণ রিপোর্ট পেতে অন্ততপক্ষে দুই থেকে আড়াইমাস সময় লাগতে পারে।

তদন্ত কমিটি গঠন: সাজিদ আবদুল্লাহর মৃত্যুর ঘটনা তদন্তে পাঁচ সদস্যের কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আজ শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মনজুরুল হক স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানানো হয়েছে। কমিটিতে কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোঃ এমতাজ হোসেনকে আহ্বায়ক করা হয়েছে। অন্য সদস্যরা হলেন শাহ আজিজুর রহমান হলের অধ্যাপক ড. এ টি এম মিজানুর রহমান, লালন শা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আরিফুজ্জামান খান, আল-হাদীস অ্যান্ড ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান ও সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. খাইরুল ইসলাম। কমিটিকে আগামী ১০ (দশ) কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।

অপরদিকে বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করেছে শহিদ জিয়াউর রহমান হল প্রশাসন। কমিটিতে হলটির প্রভোস্ট প্রফেসর ড. আব্দুল গফুর গাজী আহ্বায়ক, সহকারী প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল বারি সদস্য ও আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ড. আ.ম.ম. নুরুল ইসলাম সদস্য সচিব করা হয়েছে।

সুরতহাল প্রতিবেদনে যা জানা গেল: সুরতহাল প্রতিবেদনের প্রস্তুতকারী কর্মকর্তা রেজাউল করিমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, নাক দিয়ে রক্ত বের হচ্ছিল এবং গায়ের তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। বাম হাতের কব্জির ওপর ও ডান পায়ের হাঁটুর নিচে চামড়া ছেড়ার মতো আঘাতের চিহ্ন ছিল। তবে বুক, পেট, পিঠ, কোমর থেকে পা পর্যন্ত শরীরের অংশ স্বাভাবিক অবস্থায় ছিল। এছাড়া মরদেহ উদ্ধারের সময় সাজিদ আব্দুল্লাহ’র মাথা, কপাল ও মুখমণ্ডল স্বাভাবিক ছিল। মুখে ছিল কালো দাঁড়ি ও গোঁফ। পরনে ছিল ট্রাউজার ও টি-শার্ট। তার উচ্চতা ছিল ৫ ফুট ৭ ইঞ্চি, চুল কালো ও আনুমানিক ৮ ইঞ্চি লম্বা। চোখ বন্ধ অবস্থায় ছিল এবং এক হাত ছিল অর্ধমুষ্টিবদ্ধ।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও ছাত্র সংগঠনগুলোর শোক: সাজিদের মৃত্যুর ঘটনায় শোক জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এছাড়া শাখা ছাত্রদল, ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রশিবির, ইসলামী ছাত্র আন্দোলন ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন তাদের শোকবার্তায় সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছে।

সমালোচনার মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন: সাজিদের লাশ উদ্ধারে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের গাফিলতি আছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। তাদের অভিযোগ, গতকাল আমরা লাশ দেখে প্রশাসনকে জানিয়েছি। জানানোর প্রায় পৌঁনে এক ঘন্টা পর লাশ উদ্ধার করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে থানা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ আসতে এতো সময় লাগালো কেন? এছাড়া লাশ উঠানোর প্রায় আধা ঘন্টা পার হলেও সেখানে কোন ডাক্তার বা অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসা হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ভ্যানে করে তাকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ সনাক্তের দুই ঘন্টার মধ্যেও প্রক্টর, ছাত্র উপদেষ্টা ও জিয়া হল প্রভোস্ট কারো দেখা মেলেনি। পওে তারা রাত ৯টার পর ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. ওবায়দুল ইসলাম এবং হলের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে প্রভোস্ট অধ্যাপক গফুর গাজি এসে শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন।

এছাড়া সাজিদের অবস্থান করা জিয়া হল, জিয়া মোড় ও পুকুরের আশপাশে কোনো সিসি ক্যামেরা সচল নেই। ফলে সাজিদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ ও শনাক্ত কিভাবে করবে তা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন! আমরা প্রশাসনকে বার বার বলার পরেও তারা বাজেট ঘাটতির কথা বলে সিসি ক্যামেরা লাগায় নি।

সালাউদ্দিন/সাএ

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]