
প্রতিভা ও গুণের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা বিশিষ্ট সাংবাদিকদের সংখ্যা বাংলাদেশে খুব বেশি না হলেও, তাদের মধ্যে সাঈদুর রহমান রিমন ছিলেন এক ব্যতিক্রমী ও স্মরণীয় নাম। পেশাগত জীবনে সততা, নিষ্ঠা ও নেতৃত্বগুণের মাধ্যমে তিনি শুধু সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেননি, বরং অনুসন্ধানী সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান জাতি আজীবন শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করবে।
সাঈদুর রহমান রিমন শুধুই একজন সাংবাদিক ছিলেন না; ছিলেন একজন সত্যিকারের অভিভাবক, যিনি অসুস্থ ও অসহায় সাংবাদিকদের নিয়মিত খোঁজখবর রাখতেন, ছুটে যেতেন সাহায্য করতে। পেশাদারিত্ব রক্ষা ও সাংবাদিকদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় আমৃত্যু তিনি লড়ে গেছেন নিঃস্বার্থভাবে।
২০২৫ সালের ৩০ জুলাই, আমাদের সবার প্রিয় রিমন ভাই না ফেরার দেশে পাড়ি জমান। গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ‘সার্ভিকাল কমপ্রেসিভ মাইলোরেডিকুলোপ্যাথি’ নামক জটিল ও দুরারোগ্য রোগে ভুগছিলেন। বিদেশে চিকিৎসা করানোর সামর্থ্য ছিল না তার, আর রেখে গেছেন শুধু সততা, আদর্শ এবং সহকর্মীদের প্রতি অগাধ ভালোবাসার অনন্য উদাহরণ।
তার মৃত্যুতে সাংবাদিক সমাজে নেমে আসে গভীর শোকের ছায়া। তার জানাজায় ও শোকবার্তায় রাজনৈতিক নেতা, সাংবাদিক, সহকর্মী—সবাই মিলেমিশে একত্রিত হন। অগণিত সাংবাদিক অঝোরে কেঁদেছেন তাকে হারিয়ে। আমিও সেই কান্নার ভাষা বুঝে উঠতে পারিনি, অনুভব করেছি কত বড় অভিভাবক হারিয়েছি আমরা।
সাঈদুর রহমান রিমন মানিকগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। ৩৩ বছরের সাংবাদিকতা জীবনে তিনি গাজীপুরের দৈনিক বাংলাভূমি পত্রিকার প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এর আগে বাংলাদেশ প্রতিদিনের অনুসন্ধানী রিপোর্টিং সেলের ইনচার্জ ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন বাংলাদেশ মফস্বল সাংবাদিক ফোরামের (বিএমএসএফ) সিনিয়র সহসভাপতি। এছাড়াও বাংলানিউজ, মানবজমিন, মুক্তকণ্ঠ, বাংলাবাজার পত্রিকা, দৈনিক ইত্তেফাক ও দৈনিক সংবাদসহ বহু গণমাধ্যমে কাজ করেছেন।
অনুসন্ধানী সাংবাদিকতায় তার সাহসিকতা ও নিষ্ঠা তাকে এনে দিয়েছিল ডিআরইউ বেস্ট রিপোর্টিংসহ অনেক পুরস্কার। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি (ডিআরইউ), ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (ক্র্যাব), বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)সহ বিভিন্ন সংগঠন গভীর শোক প্রকাশ করেছে তার মৃত্যুতে।
রিমন ভাই ছিলেন আপাদমস্তক সাদা মনের একজন মানুষ—বিনয়ী, পরোপকারী ও নীতিবান। কখনো কাউকে কষ্ট দিয়ে কথা বলেছেন এমনটি কেউ বলেনি। বরং সিনিয়র সাংবাদিকদের মুখে শুনেছি—দুরূহ অনুসন্ধানে তিনি সিদ্ধান্ত নিতেন সাহসের সঙ্গে। একজন সত্যিকারের সাংবাদিক নেতা হিসেবে তিনি সব সময় পাশে ছিলেন সহকর্মীদের, বিশেষ করে মফস্বলের সাংবাদিকদের।
২০২৫ সালের ৩০ জুলাই, গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন তিনি। তাকে দ্রুত নরওয়ে-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে নেওয়া হয় এবং পরে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে বিকেল ২টায় কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৫৪ বছর। তিনি স্ত্রী, এক মেয়ে এবং অসংখ্য শুভানুধ্যায়ী রেখে গেছেন।
সাঈদুর রহমান রিমন-এর মৃত্যু যে শূন্যতার সৃষ্টি করেছে তা সহজে পূরণ হওয়ার নয়। তিনি চেতনার বাতিঘর হয়ে গণমাধ্যম জগতে আজীবন আলো ছড়িয়ে যাবেন।
ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
লেখক:
মোঃ খায়রুল আলম রফিক
সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন সংবাদপত্র সম্পাদক পরিষদ (বনেক)
সম্পাদক, দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ
সর্বশেষ খবর