• ঢাকা
  • ঢাকা, রবিবার, ২৭ জুলাই, ২০২৫
  • শেষ আপডেট ২ মিনিট পূর্বে
নিউজ ডেস্ক
বিডি২৪লাইভ, ঢাকা
প্রকাশিত : ২৬ জুলাই, ২০২৫, ০৯:০৬ সকাল

সীমান্তে আর কত মৃত্যু হলে আমরা জেগে উঠব?

ছবি: প্রতিনিধি, বিডি২৪লাইভ

বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে প্রতিনিয়ত প্রাণহানি ও অশান্তির ঘটনা যেন থামছেই না। সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে প্রাণ হারাচ্ছেন দেশের তরুণরা, আহত হচ্ছেন নিরীহ মানুষ, আর মানবতাবিরোধী কার্যকলাপ ঘটছে চোখের সামনে। গত সপ্তাহে ফেনী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও শেরপুর সীমান্তে ঘটে যাওয়া নির্মম ঘটনাগুলো এই করুণ বাস্তবতার নীরব সাক্ষী।

একদিকে সীমান্ত পেরিয়ে অনুপ্রবেশের অভিযোগ উঠলেও, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনাও ঘটছে—যেখানে গুলি চালানো, নিরীহ মানুষকে ঠেলে দেওয়া এবং তথ্য গোপনের মধ্য দিয়ে সীমান্ত এলাকা যেন মৃত্যুর নীরব মঞ্চে পরিণত হয়েছে।

বাংলাদেশের জনগণ চায় শান্তি ও মর্যাদা। কিন্তু যখনই কোনো প্রাণহানি ঘটে, তখন প্রতিবাদ আসে কেবল বিবৃতিতে, বাক্যবাণে। প্রশ্ন হলো—সীমান্তে আর কত মৃত্যু হলে আমরা জেগে উঠব? আর কত প্রাণ গেলে আমরা নিরাপত্তা, শান্তি ও মানবিক সম্মান প্রতিষ্ঠার বিষয়ে কার্যকর হব?

এই প্রশ্নগুলোই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কেবল প্রতিবাদ নয়, কার্যকর পদক্ষেপ নিয়ে সীমান্তে স্থায়ী শান্তি ও আস্থার পরিবেশ কীভাবে নিশ্চিত করা যায়, তা আমাদের ভাবতেই হবে।

ফেনী সীমান্তে গুলি: কাদের বিরুদ্ধে এই মৃত্যুপরোয়ানা?

গত বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাত ১২টার পর, ফেনীর পরশুরাম উপজেলার বাঁশপদুয়া সীমান্তে, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের বিলোনিয়া অংশে প্রবেশ করেন তিন বাংলাদেশি যুবক—মিল্লাত হোসেন (২১), মো. লিটন (৩২), এবং মো. আফছার (৩১)। তারা ২১৬৪/৩এস নম্বর পিলার অতিক্রম করে ভারতের ভেতরে গেলে বিএসএফ গুলি ছোড়ে। মিল্লাত ঘটনাস্থলেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান; লিটনকে নিয়ে যাওয়া হয় বিলোনিয়া হাসপাতালে, সেখানেই তিনি মারা যান। আফছার গুরুতর আহত অবস্থায় দেশে ফিরে আসেন।

এই এলাকা ‘চোরাকারবারিপ্রবণ’ বলে পরিচিত। তবে সেটি কি গুলি করে প্রাণ নেওয়ার বৈধতা দেয়? সন্দেহভাজন হলেও কি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের পরিপন্থী নয়? সীমান্ত রক্ষার অর্থ কি গুলি চালিয়ে মানুষ মারার লাইসেন্স দেওয়া?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ সীমান্তে গুলিবিদ্ধ দুই তরুণ: সত্য চাপা পড়ছে, না চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে?

একই দিন বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) ভোরে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার শিবগঞ্জ উপজেলার সিংনগর সীমান্তে, ১৬৪/৫-এর ১এস পিলার এলাকা দিয়ে গরু আনতে ভারতে প্রবেশ করেন সুমন (২৮) ও সেলিম (২৫) নামে দুই যুবক। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, ভারতের দৌলতপুর ক্যাম্পের বিএসএফ সদস্যরা গুলি চালালে তারা আহত হন এবং গোপনে দেশে ফিরে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে বিজিবি বলছে, গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়ে স্বজন ও বিএসএফ—দু’পক্ষই অস্বীকার করেছে।

যদি গুলি না চলে, তবে আহত দুই যুবক কোথায়? কেন তারা গোপনে চিকিৎসা নিচ্ছেন? আবার যদি গুলি চলে থাকে, তবে সত্য গোপন কেন? এই বিভ্রান্তি, দ্বৈত ভাষ্য এবং তথ্য-গোপনতা সীমান্ত পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। এতে রাষ্ট্রের জবাবদিহি ও বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে।

শেরপুর সীমান্ত দিয়ে রোহিঙ্গা পুশইন: মানবিকতা, না একতরফা দায় চাপানো?

গত বুধবার (২৩ জুলাই) রাতে, শেরপুর জেলার নালিতাবাড়ী উপজেলার নাকুগাঁও সীমান্ত দিয়ে ভারতের বিএসএফ ঠেলে পাঠায় ২১ জন রোহিঙ্গাকে—যাদের মধ্যে ১১ জন শিশু। বিজিবি সূত্রে জানা যায়, তারা সবাই ২০১৭ সালে কক্সবাজারের বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন। এক মাস আগে ভারতীয় পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে আটক রোহিঙ্গাদের স্থানীয় বিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে এবং যাচাই-বাছাই চলছে।

এই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের নাগরিক নন। তাদের এভাবে ঠেলে দেওয়া আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনের লঙ্ঘন। এটি শুধু অমানবিক নয়, বরং বাংলাদেশের কাঁধে অনায্য একটি বোঝা চাপিয়ে দেওয়া। প্রতিবেশী হিসেবে এমন পদক্ষেপ নৈতিক, কূটনৈতিক ও মানবিক—তিনদিক থেকেই দায়িত্বজ্ঞানহীন।

প্রতিবাদই কি যথেষ্ট? সময় কি কূটনৈতিক চাপ তৈরির নয়?

প্রতিটি ঘটনার পর আমরা শুনি—‘প্রতিবাদ জানানো হয়েছে’। বিজিবি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বা পররাষ্ট্র দপ্তর এই বিবৃতি দেয়। কিন্তু এসব প্রতিবাদ সীমান্ত হত্যা থামাতে পারছে কি? যদি প্রতিবাদের ভাষা প্রতিপক্ষের কানে না পৌঁছায়, তবে কূটনীতিকে নতুন ভাষা ও কৌশল খুঁজতে হবে। আন্তর্জাতিক সক্রিয়তা, দ্বিপক্ষীয় পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা এবং সীমান্ত চুক্তির বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

সীমান্তে শান্তির বদলে শোক, আস্থার বদলে আতঙ্ক কেন?

সীমান্ত একটি রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বেষ্টনী। কিন্তু তা যদি মৃত্যুর মঞ্চে পরিণত হয়, তবে আস্থার জায়গায় জন্ম নেয় আতঙ্ক। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিনের, তবে এই সম্পর্ক টেকসই হবে তখনই, যখন সীমান্তে রক্ত নয়—ভরসা প্রবাহিত হবে। উভয় রাষ্ট্রের উচিত সীমান্ত ইস্যুকে রাজনৈতিক ফাইল নয়—মানবিক অগ্রাধিকারে পরিণত করা।

সীমান্ত শুধু লাইন নয়—মানবিক চুক্তির প্রতীক

সীমান্তে যে গুলি চলে, তা কেবল একজন মানুষের জীবন কেড়ে নেয় না—তা বিদ্ধ করে দুই রাষ্ট্রের সম্পর্কের ভিত। বাংলাদেশ শান্তিপ্রিয় দেশ, তবে শান্তির মানে আত্মমর্যাদার বিসর্জন নয়। প্রতিটি বাংলাদেশির জীবন অমূল্য—এটি কেবল স্বজনের নয়, রাষ্ট্রেরও পবিত্র দায়িত্ব।

এখন সময় সত্য বলার, চোখে চোখ রেখে। শুধু কথা নয়, কাজের মাধ্যমে বন্ধুত্বের প্রমাণ দিন। আর একটি গুলিও যেন না চলে সীমান্তে, আর একটি লাশ যেন না ফেরে কাঁটাতারের এ পাশে। এই প্রতিশ্রুতি শুধু বিবৃতিতে নয়—রাষ্ট্রনায়কদের বাস্তব পদক্ষেপের মাধ্যমে আজই দিতে হবে। সীমান্ত মানে শুধু মানচিত্র নয়—সেটি জীবনের অধিকার, মর্যাদার শপথ, আর মানবতার শেষ আশ্রয়।

✍️ লেখক: রাশেদুল ইসলাম রাশেদ

(খোলা কলাম বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। বিডি২৪লাইভ ডট কম-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)

বিডি২৪লাইভ ডট কম’র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।
পাঠকের মন্তব্য:

BD24LIVE.COM
bd24live.com is not only a online news portal. We are a family and work together for giving the better news around the world. We are here to give a nice and colorful media for Bangladesh and for the world. We are always going fast and get the live news from every each corner of the country. What ever the news we reached there and with our correspondents go there who are worked for bd24live.com.
BD24Live.com © ২০২০ | নিবন্ধন নং- ৩২
Developed by | EMPERORSOFT
এডিটর ইন চিফ: আমিরুল ইসলাম আসাদ
বাড়ি#৩৫/১০, রোড#১১, শেখেরটেক, ঢাকা ১২০৭
ই-মেইলঃ [email protected]
ফোনঃ (০২) ৫৮১৫৭৭৪৪
নিউজ রুমঃ ০৯৬০৩২০২৪৩৪
মফস্বল ডেস্কঃ ০১৫৫২৫৯২৫০২
বার্তা প্রধানঃ ০৯৬০৩১৫৭৭৪৪
ইমেইলঃ [email protected]